ছাত্রদল নেতা জাল সনদে স্কুল কমিটির সভাপতি, প্রমাণ মেলায় অব্যাহতি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর উত্তর গোমদন্ডী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে জাল সনদ দিয়ে সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটি। পদটি বাগিয়ে নিতে জাল সনদে অনেকের স্বাক্ষরও জাল করেছেন তিনি, এটির প্রমাণও উঠে এসেছে তদন্তে। এমন জালিয়াতির অপরাধে ও তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সভাপতির পদ থেকে মোহাম্মদ আলীকে অব্যাহতি দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
বিষয় নিশ্চিত করেছেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ। মোহাম্মদ আলী নিজেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন।
বুধবার শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মো. আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার একটি কপি অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলীর কাছেও পাঠিয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ৪ আগস্ট শিক্ষাবোর্ডের উপ-সচিব মোহাম্মদ মোরশেদ আলম এবং উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. শফিউল আজম শফিকে দিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ‘জাল সনদে কমিটির সভাপতি হলেন মাদক মামলার আসামি ছাত্রদল নেতা!’ শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা নজরে আসে বোর্ড কর্তৃপক্ষের।
শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সনদটি যে জাল সে সম্পর্কে প্রমাণ পেয়েছে। অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে যে স্নাতক পাসের সনদ জমা দিয়েছেন, তা পুরোপুরিই জাল। সেই জাল সনদে অনেকের স্বাক্ষরও জাল করেছেন তিনি। সেটিও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তাই সভাপতির পদ থেকে মোহাম্মদ আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করা হয়েছে।’
তদন্ত কমিটির সদস্যরা বলেন, যেহেতু সনদটিই জাল, তাই জাল সনদের ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী তাই তার পদ বাতিল হচ্ছে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বোর্ড। একজন স্কুল সভাপতির বিরুদ্ধে জাল সনদ দাখিলের বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামে জাল সনদ দিয়ে মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আলীকে বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠে। গত ২৪ মার্চ বোর্ডের সাবেক বিদ্যালয় পরিদর্শকের সই করা এক চিঠিতে অ্যাডহক কমিটি গঠন করার বিষয়টি জানানো হয়। এজন্য বোর্ডে বেশকিছু ডকুমেন্ট জমা দেন মোহাম্মদ আলী। সেখানে দেখা যায়, তিনি মাদ্রাসা বোর্ড থেকে ১৯৯৭ সালে সেকেন্ড ডিভিশনে দাখিল ও ১৯৯৯ সালে থার্ড ডিভিশনে আলিম পাস করেন। তিনি ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে একটি সনদ জমা দেন। অথচ সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার নামে কোনো বিভাগই ছিল না। ২০১০ সালে ইসলামিক স্টাডিজ নামে কেবল একটি বিভাগ চালু করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে জাল সনদের প্রমাণ পান।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, জাল সনদটি বাদ দিলে মোহাম্মদ আলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা দাঁড়ায় আলিম পাস। যা দিয়ে তিনি কোনোভাবেই সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর বোয়ালখালীতে এক হাজার লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে এসআই রহমত উল্লাহ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলে ২০২২ সালের ২২ জুলাই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। বর্তমানে মাদক মামলাটি বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
What's Your Reaction?






