ফ্যাসিবাদের দোসর মুবিন খান এখনো সক্রিয়!
এম এ মুবিন খান। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসাসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি। তিনি এই পদে আছেন ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে। গুশুলিয়া, সাতাইশ, টঙ্গী, গাজীপুরে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ফ্যাসিস্টদের সহযোগীতায় তিনি এই মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই মেডিকেল কলেজের চেয়ারপার্সন ড. আহমেদ আল কবির। যিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মান আব্দুল মুহিত এবং পরবাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ভাগ্নে জামাই। মুবিন খান ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কুখ্যাত হলমার্ক কেলেঙ্কারির জনক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে এই ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলেন।
বিভিন্ন ছবিতে ড. আহমেদ আল কবির, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে মুবিন খানের উপস্থিতি ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাথে তার সখ্যতার দালিলিক প্রমাণ।
বিগত জুলাই-আগষ্ট ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুথানের পর অধিকাংশ জায়গা থেকে ফ্যাসিস্টরা বিতাড়িত হলেও মুবিন খানের মতো ফ্যাসিস্টদের সহচরেরা ভোল পাল্টে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। মুবিন খান এখনো বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসাসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর সভাপতির পদ আঁকড়ে রয়েছে। এই সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন সময়মতো করেনি ক্ষমতা হারানো ভয়ে। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে দিয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে নিয়েছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদিও কোন কর্মকর্তার ৩ টার্মের বেশি ক্ষমতায় থাকা নিষেধ রয়েছে। মুবিন খান এখন সেই গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে আজীবন এই পদ আঁকড়ে থাকার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত।
মুবিন খান বিগত স্বৈরাচারি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সাথে সখ্যতা গড়ে বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সংগঠনের বিধি মোতাবেক সদস্য মেডিকেল কলেজ গুলো বছরে ২৪ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার কথা থাকলেও মুবিন খান নূন্যতম ২ লাখ থেকে আরো বেশি বার্ষিক চাঁদা আদায় করেছেন। এছাড়া তিনি ত্রাণ ফান্ড, অটোমেশন পদ্ধতি বাতিলের নামে ফান্ডসহ বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ গ্রহণ করেছেন। অটোমেশন পদ্ধতি বাতিলের নামে এম এ মুবিন খান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে একাধিক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
স্বৈরাচারি সরকারের সখ্যতার ফলশ্রুতিতে মুবিন খান তার ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা ১৩০ এ উর্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চাইতে অনেক নামিদামি মেডিকেল কলেজও এত সিট সংখ্যা পায়নি। ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার বর্গফুট ফ্লোরস্পেস সংকট এবং হাসপাতালে আরো ৯৮ হাজার ফ্লোরস্পেস ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। শিক্ষার্থী অনুপাতে হাসপাতালে বেড ঘাটতি, বেড অকুপেন্সি ঘাটতিসহ প্রায় সব বিভাগে শিক্ষক সংকট, ল্যাব, শ্রেণিকক্ষের সরঞ্জাম, লাইব্রেরির আসন এবং সার্ভিস রুলের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া মেডিকেল কলেজে কোন অর্গানোগ্রাম নেই বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ার অভিযোগ আছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এতকিছুর পরেও এই কলেজের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, বিএমডিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিদর্শন ও ডিনস কমিটির কোন প্রকার ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। উল্টো মুবিন খান ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন পাইয়ে দিতেন। একইসাথে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ঘুষ বাণিজ্যের কালেকটর হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহলে তার পরিচয় রয়েছে। এছাড়া মানহীন মেডিকেল শিক্ষার জনকও বলা হয় এই মুবিন খানকে।
বিপিএমসিএ’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুবিন খান বর্তমান সরকারের নেত্রস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই তার ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কার ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞাত না থাকার ফলে তাকে গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসাসিয়েশনের সভাপতির পদ তার জন্যে অনেক কিছু সহজ করে দিচ্ছে। যে কারনে সে এই পদ হারাতে একেবারেই অনিচ্ছুক।
ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সহচর এই মুবিন খানকে অবিলম্বে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসাসিয়েশন থেকে বহিস্কার করে তার অতীত অপকর্মের জন্য শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহলের সচেতম অংশিজনেরা।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
What's Your Reaction?