বন কর্মকর্তা জু‌য়ে‌লের নেতৃ‌ত্বে ফুলছ‌ড়ি‌তে চল‌ছে পাহাড় কাটা ও বাড়ি নির্মা‌নের মহোৎসব!

Apr 29, 2025 - 21:21
 0  12
বন কর্মকর্তা জু‌য়ে‌লের নেতৃ‌ত্বে ফুলছ‌ড়ি‌তে চল‌ছে পাহাড় কাটা ও বাড়ি নির্মা‌নের মহোৎসব!
ছবি : সংগৃহীত

আরিয়ান খান, কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের ফুলছ‌ড়ি ও নাপিতখালী বিটে নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি ও পাহা‌ড়ি বা‌লি পাচার করা হচ্ছে। বনায়‌নের গাছ কাটা হ‌চ্ছে, সংর‌ক্ষিত বন দখল ক‌রে পাকা বাড়ি-ঘর নির্মান করা হ‌চ্ছে প্রতি‌নিয়ত। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, লঙ্ঘন হ‌চ্ছে বন সংরক্ষন আইন।

গত ক‌য়েক‌দি‌ন স‌রেজ‌মি‌নে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় কাটা, সামা‌জিক বনায়‌নের গাছ কর্তন ক‌রে চোরাই প‌থে বি‌ক্রি, পাহা‌ড়ি বা‌লি উ‌ত্তোলন, পাহাড় ও গাছ কে‌টে পাকা দালান নির্মাণসহ নানান অ‌নিয়‌মের ম‌ধ্যেই চল‌ছে ফুলছ‌ড়ি ও না‌পিতখা‌লি বন বি‌টের কার্যক্রম। ফ‌কিরাবাজার নার্সা‌রির প‌শ্চিম পা‌শে স‌্যাম্পল বা‌গিচা এলাকায় নূর হোসেন, নুরুচ্ছফা, লেদু সংর‌ক্ষিত বনভূ‌মি দখল ক‌রে পাকা বাড়ী নির্মাণ, রমজানের দখলকৃত পাহাড় কে‌টে দৈনিক ৫‌/৭টি ডাম্পার দিয়ে পাহা‌ড়ি মা‌টি পাচার, ডুলা ফকির (রহঃ) এর মাজারের পশ্চিম পাশে রবিউলে দখলকৃত পাহাড় কাটা, দারুসসালাম মাদ্রাসা পূর্ব পাশে মোবারকের বহুতল ভবন নির্মাণ, হাজীপাড়া এলাকায় মাহবুব এবং মোতা‌হে‌রের মে‌য়ের পাকাবাড়ী নির্মাণ, বামবাগান রোডে পিয়াজ্যা দোকানের পিছনে শাহাজাহান মিস্ত্রির পাকা বাড়ী নির্মাণ, সাহাব উদ্দিন মেম্বারের পূর্ব পাশের রোডে সোলতান নগরে নুরুল ইসলামের পাকা বাড়ী নির্মাণ কর‌ছে। খুটাখালীর পূর্ব নয়াপাড়া এলাকা থে‌কে গভীর রা‌তে পাহা‌ড়ি বা‌লি পাচার হ‌চ্ছে প্রতি‌নিয়ত।

স‌রেজ‌মি‌নে সত‌্যতা মি‌লে‌ছে বিট কর্মকর্তা‌কে মোটা অং‌কের মা‌সোহারা দি‌য়েই এসব বন‌বিধ্বংসী অপকর্মগু‌লো চলছে। বিট কর্মকর্তার অপক‌র্মে জ‌ড়িত আছে বিটঅ‌ফি‌সের এফ‌জি এনাম ও হেডম‌্যান শ‌ফি। পাহাড়ি মা‌টি ও বা‌লি পাচা‌রে ড‌্যাম্পার প্রতি ১০০ টাকা, যেসকল ড‌্যাম্পার বন‌বিভা‌গের অপক‌র্মে জ‌ড়িত সেগু‌লোর থে‌কে মা‌সিক মা‌সোহারা দি‌তে হয় ৫ হাজার টাকা, গুদাম ঘর নির্মা‌ণে ২০/২৫ হাজার টাকা, পাকা বাড়ী নির্মা‌নে ৪০-৬০ হাজার টাকা, জব্দকৃত গাড়ীর সিওআর কর‌তে ৫-১০ হাজার টাকার জ‌রিমানা‌র স্লিপ দি‌য়ে পা‌র্টির থে‌কে আদায় ক‌রে লক্ষা‌ধিক টাকা।

লো‌কেমু‌খে প্রচার আছে বিট কর্মকর্তা জু‌য়ে‌লের নেওয়া টাকাগু‌লো রেঞ্জ, এসিএফ ও ডি‌পো বরাবর পৌ‌ছি‌য়ে দেওয়া হয়। না পৌছা‌লে বারবার অ‌ভিযান, মামলাসহ নানান ধর‌নের হয়রা‌নি করাও হয় ব‌লে জানা যায়।
বনবিট ও রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে দিয়ে মাটি-বা‌লি ভর্তি গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কপথ হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে গেলেও বন কর্তৃপক্ষ নীরব থাকে। সংর‌ক্ষিত বন দখল ক‌রে পাকা বাড়ী নির্মান, পাহাড় কাটা, পাহা‌ড়ি মা‌টি-বা‌লি ও বনায়‌নের কাঠ পাচার ইত‌্যা‌দি বন আইন প‌রিপ‌ন্থি কর্মকান্ড। বিট কার্যাল‌য়ের কর্মচা‌রি থে‌কে রেঞ্জ ও বিভাগীয় কার্যাল‌য়ের উর্ধতন কর্মকর্তা‌দের হা‌তে সময়ম‌তো পৌ‌ছে যায় পাহাড়‌খে‌কো‌দের এই অপকর্মের মা‌সোহারা।

অনুসন্ধা‌নে আরো জানা যায়- জু‌য়েল চৌধুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা থাকাকা‌লিন প‌তিত স্বৈরাচারি আওয়ামীলী‌গের নেতা‌দের‌ সা‌থে যৌথভা‌বে বনায়‌নের গাছ কাটা, পাহাড় নিধন, মা‌টি-বা‌লি উত্তোল‌ন ও পাচার সি‌ন্ডি‌কে‌টে জ‌ড়িত ছি‌লেন। পরবর্তী‌তে রাজ‌নৈ‌তিক পট প‌রিবর্ত‌নের ফ‌লে স্বৈরাচা‌রি শাসনাম‌লে তার অপরাধগু‌লো প্রমা‌ণিত হওয়ায় তা‌কে রেঞ্জ কর্মকর্তা থে‌কে ডি‌মোশন ক‌রে বিট কর্মকর্তা করা হয় এবং চল‌তি বছ‌রের ফেব্রুয়া‌রি‌তে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছ‌ড়ি রেঞ্জ কার্যাল‌য়ে ‌বিট কর্মকর্তা হি‌সে‌বে দা‌য়িত্ব দেওয়া হয়। তি‌নি ভারতীয় কট্টর হিন্দুত্ববাধী সংগঠ‌নের ইসক‌নের সদস‌্য ব‌লেও জানা যায়। ইতিপূ‌র্বে অ‌নিয়ম দূর্নীতির দা‌য়ে ফুলছ‌ড়ি বিট কর্মকর্তা ফজলুল কা‌দের চৌধুরী এবং না‌পিতখালী বিট কর্মকর্তা‌ মনছুর আলম‌কে ডি‌মোশন ক‌রে শা‌স্তিমূলক বদ‌লি করা হ‌য়ে‌ছে।

বি‌শ্লেষনে দেখা যায়- ডি‌মোশন হওয়া বিট কর্মকর্তা জু‌য়ে‌ল চৌধুরীর যোগদা‌নের পর থে‌কে পূ‌র্বের থে‌কেও বহুগুণ বে‌শি দূর্নীতি সংঘ‌টিত হ‌য়ে‌ছে তারই দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত ফুলছ‌ড়ি ও না‌পিতখালী বন‌বি‌টে। অ‌নিয়ম দূর্নী‌তি ক‌রেও পার পে‌য়ে যা‌চ্ছেন তি‌নি। এতো অ‌ভি‌যোগ থাকার প‌রেও অদৃশ‌্য কোন কার‌নে জু‌য়েল চৌধুরীর বি‌রো‌দ্ধে তার উর্ধ্বতন রেঞ্জ কর্মকর্তা রা‌শিক আহসান দিপ্ত, সহকা‌রি বন সংরক্ষক শীতল পাল এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মারুফ হো‌সেন‌ কোন ব‌্যবস্থা নি‌চ্ছে না। লো‌কেমু‌খে প্রচার আছে জু‌য়েল চৌধুরী তার অনিয়ম দূর্নী‌তির একটা অংশ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা‌দের কা‌ছে সময় ম‌তো পৌ‌ছে দেয়।

অ‌ভি‌যুক্ত বিট কর্মকর্তা‌ জু‌য়েল চৌধুরীর সা‌থে মু‌ঠো‌ফো‌নে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ফুলছ‌ড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা রা‌শিক আহসান দিপ্ত জানান, অ‌ভি‌যোগগু‌লো সুস্পষ্টভা‌বে আমার হুয়াটস্ অ‌্যা‌পে দিন। তদন্ত ক‌রে ব‌্যবস্থা নি‌বো।

ফুলছ‌ড়ি এরিয়ার সহকা‌রি বন সংরক্ষক শীতল পাল জানান, অভিযুক্ত বিষয়ে অভিযান চলমান।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ মারুফ হো‌সেন জানান, উপরোক্ত অভিযোগগুলো রেঞ্জার অফিসার রাশিককে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow