শীর্ষ ধনীদের অস্বাভাবিক সম্পদ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কোটিপতিদের (বিলিয়নিয়ার) সম্পদ ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৫০৯ বিলিয়ন দিরহাম হয়েছে। তাদের মোট সম্পদ এক বছরেই ১৪৪ বিলিয়ন দিরহাম বেড়ে অর্ধ ট্রিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে। বেশি উচ্চ-আয় সম্পন্ন এসব ব্যক্তিরা করমুক্ত আয়ের সুযোগ, সম্পদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আমিরাতে বসবাস শুরু করার ফলে এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ইউবিএসের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিরাতের কোটিপতিদের মোট সম্পদ ৩৯.৫০ শতাংশ বেড়ে ১৩৮.৭০ বিলিয়ন ডলার (৫০৯ বিলিয়ন দিরহাম) হয়েছে। ইউএই-তে নতুন একজন বিলিয়নিয়ার যোগ হওয়ায় বর্তমানে আমিরাতকে নিজেদের ঘর বানানো কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮। খবর খালিজ টাইমসের।
এ সম্পর্কিত ‘বিলিয়নিয়ার অ্যাম্বিশাস রিপোর্ট’ জানায়, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় কোটিপতিদের সম্পদ ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং কোটিপতির সংখ্যা ৭০ জন বেড়ে ৭২৮ জনে ঠেকেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, আরব বিশ্বে কোটিপতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি আমিরাতে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের (২৬ বিলিয়নিয়ার) পরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
সুইস ব্যাংক জানিয়েছে, আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সেই শীর্ষ গন্তব্য যেখানে বিলিয়নিয়াররা বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় বেশি বাসস্থান গড়ে তুলেছিলেন।
ব্যাংকটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানায়, 'বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি অনেকের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে এসেছিল এবং তাদেরকে জীবন নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছিল। কোটিপতিরাও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাদের ঘরবাড়ি, পরিবার এবং ব্যবসা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকার কারণে তারা সবসময়ই স্থান পরিবর্তন করে থাকেন। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে তাদের স্থানান্তরের হার বেড়ে যায়।
২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ২,৬৮২ কোটিপতির মধ্যে ১৭৬ জন স্থান পরিবর্তন করেছেন, যা প্রতি ১৫ জনে একজন। তারা সুইজারল্যান্ড, আমিরাত, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে নতুন নিবাস গড়ে তোলেন। গত চার বছরে যেসব কোটিপতিরা (যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি) স্থানান্তরিত হয়েছেন, তাদেরকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চল।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কোটিপতি ইউবিএসকে বলেন,'মানুষ শুধুমাত্র কর সুবিধার জন্য নয়, নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক কারণেও স্থানান্তরিত হচ্ছে। কয়েক বছর আগে আমি আমার পরিবার নিয়ে এমন একটি দেশে স্থানান্তরিত হয়েছিলাম যা এই সুবিধাগুলো নিশ্চিত করে। যদি রাজনৈতিক বিভাজন-সংঘাত, অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলার অভাব এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় এবং সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে না তোলে, তবে এই ধারা চলতেই থাকবে।'
বিশ্বব্যাপী চালানো ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কোটিপতিদের মোট সম্পদ ১২১ শতাংশ বেড়ে ৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে রেকর্ড ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। গত বছরেই সম্পদ ২ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়ে যায়।
গত দশকে প্রযুক্তি খাতের কোটিপতিদের সম্পদ সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে গেছে। প্রযুক্তি খাতের কোটিপতিদের সম্পদ ২০১৫ সালের ৭৮৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, শিল্প খাতের বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারে বেড়ে ৪৮০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উঠে যায়।
ব্যাংকটি আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সুদের হার কমে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কোটিপতিরা সম্পদের ধরন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করছেন।
আগামী ১২ মাসে ৪৩ শতাংশ কোটিপতি আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন এবং ৪২ শতাংশ লাভজনক বাজারে শেয়ার বিনিয়োগ বাড়াবেন। পাশাপাশি তারা নিরাপদ স্থান বা দেশে বিনিয়োগের দিকেও বেশি ঝুঁকবেন।
What's Your Reaction?