সুনামগঞ্জে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

Oct 28, 2025 - 22:42
 0  6
সুনামগঞ্জে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
ছবি : সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা সদরে শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য নতুন ভবনের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মিতব্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এর স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সরেজমিনে নির্মাণস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট ছোট ইটের খোয়া, নিম্নমানের ইট ও মাটি মিশ্রিত বালি দিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বরত প্রকৌশলীর যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারি অর্থ অপচয় করছে।

এলাকাবাসী এবং স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের দাবি, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালিতে প্রচুর পরিমাণে মাটি ও কালো মিশ্রণ রয়েছে। পাশাপাশি খোয়া হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের ছোট আকারের ইটের কণা ব্যবহার করা হচ্ছে।

উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী শাকিল আহমেদ জানান, ‘ভবন নির্মাণে ছোট ছোট ইটের কনক্রিট, নিম্ন মানের ইট ও মাটি মিশ্রিত বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হোসেন বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারি অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর সিন্ডিকেট এর পেছনে কাজ করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আমরা দ্রুুত তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই।’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এই অনিয়মের বিররুদ্ধে সোচ্চার হলেও প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে যতটুকু পেরেছি সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে বলেনি নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। যদি কেউ বলত সিডিউল বহির্ভূত কাজ হচ্ছে তাহলে ভেরিফাই করে দেখতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’

অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলাল এই বিষয়ে পুরোপুরি নীরব। তবে স্কুল ভবণ নির্মাণে তার কোন অভিযোগ নাই।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিম্নমানের বালু ও খোয়া কেমনে হয় তা জানা নাই। আমাদের সবকিছু ভাল মেটেরিয়াল দিয়ে কাজ করছি। এই কাজ নিয়ে অনেক পেরেশানিতে আছি। অনেক মানুষ আমাকে ফোন দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে সুবিধা ভোগ করছে। আর ভাল মালামাল আমরা দিতে চাই, কিন্তু অনেকেই ফোন দিয়ে বলে আমার মালামাল নিতে হবে, আর যদি না আনি আমাদের সমস্যা হয়। তাদের কাছ থেকেই ইট, বালু ও পাথর কিনতে হয় আমাদের। আমরা সুযোগ সুবিধা অনেকরেই দিছি। যাদের এই সুবিধা দিচ্ছি তারাই আবার আমাদের বিপক্ষে বলছে।’

একইভাবে গোবিন্দ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মিতব্য ভবনেও নিম্নমানের ইট, বালু ও খোয়া দিয়ে কাজ করার দৃশ্য দেখা গেছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মিল্টন চৌধুরী এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে জে, বি এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আতিক মিয়া (গোবিন্দ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ঠিকাদার) বলেন, ‘আমাদের ভবনের কাজ প্রায় ৯০% শেষের দিকে। এখন শুধু জল ছাদ ও প্লাস্টারের কাজ বাকি। তাই নাম্বার ইটের ডাস্ট নিয়ে আসছি জলছাদ করার জন্য। এলাকার মানুষ বুঝে না তাই নিম্নমানের সামগ্রী বলে অভিযোগ করছে।’

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা প্রকৌশলী নয়ন মিয়া (সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী) জানান, ‘বালুর নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করানো হবে এবং যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে এলাকাবাসী জানান, এর আগে ৫ মে এলাকাবাসী নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে এসে অনিয়মের সত্যতা পান এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এত বড় অনিয়ম চললেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্তৃপক্ষের নীরবতা তাদের ক্ষুব্ধ করছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মিত এই ভবন যেন টেকসই ও নিরাপদ হয়, সে নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে বলে তারা দাবি জানিয়েছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow