১৭ বছর আ.লীগের সুবিধা নেওয়া ব্যক্তি এখন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির বড় নেতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভোল পাল্টে তিনি এখন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির বড় নেতা। বলছি হারুন অর রশিদ খান হাসান এর কথা।
বিগত ১৭ বছরে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু’র নামে মামলা হয়েছে ৮২টি। অথচ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিশেষ সুযোগ সুবিধা নেওয়া এই হারুন অর রশিদ খান হাসান সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদে থাকলেও তার নামে কোন মামলা হয়নি। আর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যখন বিএনপি নেতাকর্মীরা জেলে অথবা বাড়ি ছাড়া ঠিক তখনই হাসান সিরাজগঞ্জ পৌরসভার হোসেনপুরে করেছেন ৫তলা বাড়ি। একাধিক ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দখল করেন সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাব। আর তাতে হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। প্রেসক্লাবের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, ছাত্রজনতা হত্যা মামলার আসামির তালিকায় নাম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, এমনকি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে গেলেও সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন সহ নানা অপকর্মে মেতেছেন হারুন অর রশিদ খান হাসান।
সম্প্রতি তার এসব দূর্নীতি ও অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয় এর জের ধরে সিরাজগঞ্জের স্থানীয় একটি পাঠক নন্দিত পত্রিকা ‘দৈনিক যুগের কথা’ জেলা প্রশাসকের নাম ব্যবহার করে সংবাদপত্র হকারদের কাছ থেকে পত্রিকা ছিনিয়ে নেয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে হারুন অর রশিদ খান হাসান নিজের অপকর্ম ঢাকতে তার অনুসারীদের নিয়ে ওই পত্রিকা বন্ধের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায় যা এখনো বিদ্যমান।
সিরাজগঞ্জে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, ‘‘আমরা সিরাজগঞ্জে স্বাধীন ভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারছিনা। প্রতিনিয়ত হাসানের চাপ। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে গেলে কখনো আত্মীয় আবার কখনো বা শুনতে হচ্ছে তার হুমকি ধামকি। শুধু তাই নয় নামমাত্র ভুঁইফোড় এক মিডিয়ার পরিচয় পত্র দিয়ে নিজের স্ত্রীকে বানিয়েছেন প্রেসক্লাবের সদস্য। অথচ প্রেসক্লাবের সদস্য পদে স্থান হয়নি মূলধারার গণমাধ্যমে কর্মরত অনেক সাংবাদিকের।’’
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা জানান, ‘‘হারুন অর রশিদ খান হাসান সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদে থাকা সত্বেও আমাদের সাথে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। এবং মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে আমাদের বাসায় আশ্রয় দিয়েছি। কোন মামলায় হয়রানি হতে হয়নি।’’
আওয়ামী লীগ নেতারা আরও জানান, ‘‘যেখানে বিএনপির অনেক নেতা ঘর বাড়ি রেখে পালিয়ে বেড়িয়েছেন কিন্তু হাসান ভাই আমাদের বাড়িতে আরাম আয়েশেই ছিলেন। শুধু তাই নয় আমাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে হাসান ভাইয়ের স্ত্রীকে (ভাবি) আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক সমিতির নেত্রী বানিয়েছিলাম।’’
এ বিষয়ে হারুন অর রশিদ খান হাসান বলেন, আমি বিএনপির জেলার নেতা। সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি, আমাকে সাংবাদিকতা শেখাবেন না। যা লিখবেন, তার ওজন আবার সহ্য করতে পারবেন তো ?
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা সিরাজী এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু। সাজানো সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী ঘোষণা করার সাথে সাথে ১৭ জানুয়ারি সবার আগে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশিদ খান হাসান ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে।
What's Your Reaction?






