গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় চলতি সপ্তাহে ইসরাইল সফর করবেন ট্রাম্প

আগামী সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেছেন, গাজায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনার জন্য চলতি সপ্তাহে মিশরের পর ইসরাইল সফর করবেন তিনি। এরইমধ্যে হামাসের বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে বার্তা দিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ। আর হামাস জানিয়েছে, গাজার শাসনব্যবস্থায় কোনো ভিনদেশি শক্তির আধিপত্য মেনে নেয়া হবে না।
হয়তো ফিরে গিয়ে দেখবেন বসতবাড়ির শেষ চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট নেই। কিন্তু তাতে কী আসে যায়! টানা দু’বছর গাজার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ানোর পর নিজের ভিটে-মাটিতে ফিরে যাওয়া আনন্দ ফিলিস্তিনিদের চোখেমুখে।
গাজার স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘পালিয়ে বেঁচে থাকা সহজ ছিল না। এখানে যাদের দেখতে পাচ্ছেন তারা সবাই ঘর ছেড়েছেন। আর এখন সবাই অনেক খুশি। কারণ আমরা আমাদের বাড়ি ফিরতে পারছি।’
দীর্ঘদিন বাড়ি ফিরছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। কিন্তু ফিরে গিয়ে কী দেখবেন তা জানেন না অনেকেই। স্যাটেলাইট ইমেজে যার কিছুটা আভাস দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। উত্তর গাজার যে প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা, সেখানে হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ছাড়া ইসরাইলি বোমার আঘাতে সবই মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।
শুক্রবার গাজার নির্দিষ্ট লাইন থেকে সেনা প্রত্যাহার করলেও, নতুন কয়েকটি পয়েন্টে সেনা মোতায়েন করছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধ থাকলেও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে অধিকৃত পশ্চিম তীরে। মিলেছে প্রাণহানির খবরও। আর গাজার হাসপাতালগুলোতে একের পর এক জমা পড়ছে ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়া মরদেহ। ওয়াফা নিউজ এজেন্সি নিশ্চিত করেছে, শুক্রবার গাজার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর এত কিছুর পরেও হামাসের বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে বার্তা দিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ।
মন প্রেক্ষাপটে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী সোমবার সব জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। পাশাপাশি ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করা হবে ২৮ জিম্মির মরদেহ। এছাড়া, গাজায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় চলতি সপ্তাহে মিশরের পর ইসরাইল সফরে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বৈঠক করবেন ইসরাইলি মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে। আরও বলা হচ্ছে, জিম্মি বিনিময়ের সময় জেরুজালেমে উপস্থিত থাকতে পারেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা এরই মধ্যে জেনেছেন সোমবার জিম্মিরা বাড়ি ফিরে আসবে। তাদের হস্তান্তর করার প্রস্তুতি চলছে। জিম্মিদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। মাটির নিচে সুড়ঙ্গে রাখা হয়েছিল তাদের। জীবিত জিম্মিদের ছাড়াও ২৮জন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।’
গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের এই শান্তি প্রচেষ্টা স্বাগত জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পরিস্থিতি যেন আর খারাপের দিকে না যায় এজন্য ইসরাইলকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছে চীন।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শাসনব্যবস্থায় ভিনদেশি হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না বলে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন। বিবৃতিতে আরও বলা হচ্ছে, উপত্যকার শাসনব্যবস্থা কেমন হবে তা পুরোপুরি ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত বিষয়। যদিও মিশর, সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের সহায়তায় গাজা পুনর্গঠনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
অন্যদিকে গাজার ত্রাণ সরবরাহ সচল করতে সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা। তারা বলছে, গাজায় প্রবেশের জন্য ত্রাণ বোঝাই ৬ হাজার ট্রাক প্রস্তুত আছে। আর ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গাজার অন্তত ৫০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। এই শিশুদের জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা না গেলে উপত্যকাটিতে ভয়াবহ শিশুমৃত্যু দেখা দিতে পারে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস বলেন, ‘উনিসেফ প্রস্তত আছে। দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ সচল করতে হবে। যতগুলো ক্রসিং ব্যবহার করে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব, তা খুলে দিতে ইসরাইলকে আহ্বান জানাই। পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। নবজাতক ছাড়াও শিশুরা মৃত্যুঝুঁকিতে আছে।’
What's Your Reaction?






