ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্ব, ১৫ দিন ধরে বন্ধ আটলংকা বাজারের ২০টি দোকান

Oct 18, 2025 - 20:46
 0  2
ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্ব, ১৫ দিন ধরে বন্ধ আটলংকা বাজারের ২০টি দোকান
ছবি : সংগৃহীত

পাবনা প্রতিনিধি

ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্বের জেরে ১৫ দিন ধরে বন্ধ স্থানীয়  বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। অনেকে ঋনের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পড়েছেন বিপাকে। 

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বন্যাগাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী ২০ জন ব্যবসায়ী পরিস্থিত থেকে উত্তোরণের ইউএনও ও থানার ওসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনও সুরাহা পাননি তারা।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, আটলংকা বাজারের পাশে চিকনাই নদীর ধারে অবস্থিত ঈদগাহ মাঠ নিয়ে বন্যা গাড়ি ও আটলংকা গ্রামের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ নিয়ে গত ২ অক্টোবর দুই গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাতে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুই গ্রাম বাসীর দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। আটলংকা বাজারে রয়েছে বন্যাগাড়ি গ্রামের অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সংঘর্ষের ঘটনার পর তাদের সেই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। 

বন্যাগাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আটলঙ্কা গ্রামের মানুষ তাদের বাজারে যেতে দিচ্ছে না। দোকানপাট খুলতে দিচ্ছে না। 

মামুন টেইলার্স এর মালিক আল মামুন বলেন, ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে ঠিক আছে। তাই বলে আমরা বাজারে ব্যবসা করতে পারব না কেন। আমাদেরকে দোকান নিয়ে খুলতে দিচ্ছে না আটলংকা গ্রামের মানুষ। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এখন ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছি না। বিগত ১৫ দিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে খুব হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।

মুদি দোকানদার হাবিবুল্লাহ বলেন, ১৫ দিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় আমার দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষতি আমাকে কে পুষিয়ে দেবে। ব্যবসা করতে না পারলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। দোকান খুলতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। 

পল্লী চিকিৎসক আব্দুল করিম বলেন, দোকান বন্ধ থাকায় আমি ওষুধপত্র নিয়ে রোগী দেখতে পাচ্ছি না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। গ্রামে রোগীরাও কষ্ট পাচ্ছে। 

রড সিমেন্ট ঢেউটিন ব্যবসায়ী ফজলুল হক, ওয়ার্কসপ মালিক রুবেল হোসেন বলেন, অনেকগুলো টাকা ঋণ নিয়ে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। এ সপ্তাহে আমাদের কিস্তি আছে। কিভাবে কিস্তি দেব সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা। ব্যবসা করতে না পারায় আমরা পরিবার নিয়ে খুব দীনহীন অবস্থা পার করছি। অসুস্থ মানুষ, চিকিৎসা টাকা জোগাড় করতে পারছি না।

ভুক্তভোগীরা বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এখনও কোন সূরাহা পাইনি।প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। 

এ বিষয়ে আটলঙ্কা গ্রামের বাসিন্দা হারেস আলী বলেন, বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষ রাস্তা অবরোধ করে রাখছে। ওই রাস্তা দিয়ে আটলংকা গ্রামের কেউ গেলে তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। মহিলারা তাদের বাচ্চাদের মাদ্রাসা ভাত দিতে গেলে তারা বোরকা খুলে নানাভাবে হয়রানি করে। এখন গ্রামের প্রধানরা আছে তারা যেটা করে সেটা করবে। 

আটলংকা গ্রামের আর এক বাসিন্দা বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম মাহমুদ বলেন, গ্রামের মুরুব্বীরা আছেন, গ্রাম প্রধানরা আছেন, সবাইকে ডেকে নিয়ে বসে আলোচনা করে দেখি কি করা যায়।

এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, উভয়পক্ষ কে নিয়ে বসে আলোচনা করেছি। দুই পক্ষের ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেছে। আটলংকা গ্রামের মানুষ বন্যাগাড়ি দিয়ে চলাচল করবে।৷ আবার বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষও আটলংকা বাজারে যাবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলবে। আশা করছি দু'একদিনের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow