কলেজে ভর্তি নীতিমালায় আসতে পারে বড় পরিবর্তন

Jul 14, 2025 - 23:21
 0  1
কলেজে ভর্তি নীতিমালায় আসতে পারে বড় পরিবর্তন
ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কলেজ ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। তবে এবারের ভর্তি মৌসুমে অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন। শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় কোটাব্যবস্থা পুনর্গঠন, ভর্তি প্রক্রিয়ায় সময়সীমা ও কারিগরি সমন্বয় এবং ভালো কলেজে প্রবেশের শর্তাবলীতে পরিবর্তন আসতে পারে।

আবার এ বছর এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। কিন্তু শিক্ষাবোর্ড ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ২৪০-২৫০টি মানসম্মত কলেজে আসন রয়েছে মাত্র এক লাখের মতো। ফলে, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ইচ্ছেমতো কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, এবার ভর্তি নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। সব বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকরা খসড়া প্রস্তুত করেছেন, এখন তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। তিনি আরও বলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের ভর্তিকে সামনে রেখে কোটাব্যবস্থা, মেধাক্রম অনুযায়ী অগ্রাধিকার, মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া এবং বেসরকারি কলেজগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে খসড়া প্রস্তাব তৈরি হয়েছে।

জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই স্বপ্ন দেখে ঢাকার অভিজাত কলেজগুলোতে পড়ার। কিন্তু সেসব কলেজ যেমন নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, ভিকারুননিসা, রেসিডেনশিয়াল, রাজউক, ধানমন্ডি আইডিয়াল ইত্যাদির আসন সংখ্যা খুবই সীমিত।

গত বছর দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে আট হাজার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো কলেজ পায়নি। পরে তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে অপেক্ষাকৃত কম মানের কলেজে ভর্তি হয়।

ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক রেজাউল হক বলেন, ভালো কলেজগুলোর নিজস্ব স্কুল শাখার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ আরও কমে যায়। সেইসঙ্গে কেউ কেউ সঠিকভাবে কলেজ পছন্দ নির্ধারণ না করায় তারা প্রথম ধাপে বাদ পড়ে।

ব্যানবেইস ও শিক্ষাবোর্ডের তথ্যমতে, সারা দেশে প্রায় ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন রয়েছে ২২ লাখ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে রয়েছে প্রায় ৯ লাখ আসন এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে রয়েছে আরও ২ লাখ ৪১ হাজার আসন।

সামগ্রিকভাবে একাদশে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৩৩ দশমিক ২৫ লাখ, অথচ উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ শিক্ষার্থী। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সাড়ে ২০ লাখ আসন শূন্য থাকছে, যা শিক্ষার্থীর ঘাটতিতে ভুগতে থাকা বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য কঠিন বার্তা। ঢাকা বোর্ডের এক পরিদর্শক জানান, গত বছর অন্তত ২২০টি কলেজে কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়নি। এই সংকট শিক্ষার মান এবং অবকাঠামোগত পরিকল্পনার অভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে।

বর্তমানে ৭ শতাংশ কোটার মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তরের জন্য সংরক্ষিত। তবে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে’ শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য একটি বিশেষ কোটা চালুর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কোটার যৌক্তিকতা নিয়েও আলোচনা চলছে।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ পরিদর্শক বলেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সংখ্যা কলেজ পর্যায়ে নেই বললেই চলে। নাতি-নাতনিদের কোটা উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে। তাই এটি পরিবর্তনের সময় এসেছে। অনলাইন কেন্দ্রীয় ভর্তির আওতায় না থেকেও প্রতিবারই নিজস্ব নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে কয়েকটি মিশনারি কলেজ। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও বলেন, আমরা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতি অব্যাহত রেখেছি। এ বছরও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফ কলেজও তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এর আগে গত ১০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) প্রকাশ করা হয়েছে এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। এবার পাশের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow