উচ্চকক্ষ ও নারী প্রতিনিধিত্বে ঐকমত্য হয়নি

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন এবং সংসদের নিম্নকক্ষের নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করতে অধিকাংশ দল একমত হলেও, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের ১৩তম দিনে সংলাপ শেষে এ কথা জানিয়েছেন জাতীয় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘এ দুটি বিষয় আগেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিছু প্রাথমিক সমর্থন মিললেও পদ্ধতিগত মতানৈক্যের কারণে ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি।’
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব করেছিল, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর) ১০০ আসনের উচ্চকক্ষের আসন বন্টন হবে। বিএনপি পিআরে রাজি নয়। দলটি চায়, সংসদে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টিসহ ২১টি দল পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ চায়।
বিএনপিসহ পাঁচটি দল এতে রাজি না হওয়ায় সোমবার কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করে। তবে তা সরসারি নাকচ করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল।
আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘তবে উচ্চকক্ষ গঠনের পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ থেকেই যাচ্ছে। একটি পক্ষ বলছে, সংসদে দলগুলোর আসন সংখ্যার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক। অপর পক্ষের প্রস্তাব, জাতীয় ভোটের শতাংশ অনুযায়ী আসন বণ্টন- যা কমিশনেরও মত। তবে এখানেও চূড়ান্ত ঐক্যমত তৈরি হয়নি। আলোচনা অব্যাহত থাকুক যাতে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পৌঁছাতে পারি। এই দুই বিষয়ে আলোচনা আগামীকালও (মঙ্গলবার) চলবে।’
সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির বিষয়ে কমিশনের প্রাথমিক প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে থাকা ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি করে ১০০ করা হবে। ১০০ আসন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন। এতে এনসিপি রাজি হলেও, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ দল সায় দেয়নি। তাই সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল এ প্রস্তাব নাকচ করে।
বিএনপি আগের মতই জানায়, নারী আসন ১০০ করতে একমত হলেও, নির্বাচন হতে হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে। জামায়াত জানিয়েছে, পিআর পদ্ধতিতে আসন বণ্টন হলে, তারা আসন বৃদ্ধিতে রাজি। এনসিপি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনে নতুন ফর্মুলা দিয়েছে।
আশা প্রকাশ করে আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় এই সংলাপ সফলভাবে সম্পন্ন হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় কাঠামো গড়ে উঠবে।’
আলী রীয়াজ জানান, মঙ্গলবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও, তা হবে না। এদিন নারী প্রতিনিধিত্ব ও উচ্চকক্ষ বিষয়ক আলোচনা হবে। কিছু রাজনৈতিক দল এরইমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন নিয়ে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো নিয়ে বুধবার বা বৃহস্পতিবার কমিশন আলাদা করে বৈঠকে বসবে।
What's Your Reaction?






