ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়াই তাদের পেশা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সাংবাদিকতায় একটি স্বত:সিদ্ধ কথা রয়েছে: শুদ্ধতা হচ্ছে এ মহান পেশার প্রধান অঙ্গ। ‘সাংবাদিকতা বাণিজ্যের’ ভিড়ে তা আজ ক্রম অপসৃয়মাণ। পঙ্গু হয়ে গেছে সেই মূল অঙ্গ। শুদ্ধতার মধ্যে ঢুকে পড়েছে দুর্নীতি। হতশ্রী দেশীয় এ সাংবাদিকতাকে অনেকেই বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা, অপ-সাংবাদিকতা যার মধ্যে বাণিজ্যের কারুকলা নিহিত। আরো স্পষ্ট ও সরাসরি করে বললে বাক্যটি দাঁড়ায়- সাংবাদিকতার নামে ভণ্ডামি, যা পেশা নয়, অসুস্থ ব্যবসা।
সিরাজগঞ্জে তেমনি কতিপয় কিছু ভন্ড সাংবাদিকতা পেশার আড়ালে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা জিডি করে আপোষ মিমাংশার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি ব্ল্যাকমেইল চক্র। গত কয়েকমাসে এমন একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
কথিত সাংবাদিক জাহিদুল-লিটন গংয়ের দায়ের করা জিডিগুলোতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারপিট, প্রাণনাশের হুমকি, মোটরসাইকেল ভাংচুরসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এসব জিডির প্রেক্ষিতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে ডেকে আপোষ মিমাংশার ফাঁদে ফেলে জরিমানার নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি।
সাংবাদিক নামধারী ওই চক্রটি যে বিষয়ে সংবাদ করতে গিয়ে মার খেয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি বা মোটরসাইকেল ভাংচুর অভিযোগ আনা হয়, সেই বিষয়ে আদৌ কোন সংবাদ প্রকাশ বা সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমেও প্রচারিত হয়নি।
স্থানীয় সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই প্রতারক চক্রটি মুলধারার সাংবাদিক নয়। এরা সাংবাদিকতার আড়ালে নাটক সাজিয়ে থানায় সাধারন ডায়েরি করে। বিষয়টা মিমাংশার জন্য ভুক্তভোগী ব্যাক্তিকে জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে ডেকে এনে অভিযোগের আপোষ মিমাংশা করতে বলা হয়। আর আপোষ মিমাংশার নামে মোটা অংকের টাকায় দফারফা হয়। আপোষের লিখিত কপি থানায় দিলে ঘটনাটি মিমাংসা হয়ে যায়।
জাহিদুল গংয়ের দায়ের করা জিডি থেকে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ পৌর মালশাপাড়ার মৃত রইচ উদ্দিন এর পুত্র জাহিদুল হক, তার সঙ্গী ইয়ামিন ও লিটন গত (২১ জানুয়ারি) ২০২৫ইং তারিখে বিকেল সাড়ে তিনটায় এলাকাবাসীর অভিযোগের আলোকে সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের রুপের বেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিপন এর কাছে যান। স্কুলে গিয়ে স্কুলটি তালাবদ্ধ পান। তাৎক্ষনিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিপনকে মোবাইল ফোন করা হয়।
ফোন পেয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিপন ৩টি মোটর সাইকেলযোগে লোকজন নিয়ে এসে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিপনকে বিবাদী করে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করে জাহিদুল হক। পরবর্তীতে শিক্ষক রিপন বাধ্য হয়ে তাদের সাথে মোটা টাকায় আপোষ মিমাংসা করে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কেঁদে ফেলেন। টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর না দিয়ে দ্রুত চলে যান।
স্থানীয়রা জানান, সংবাদ সংগ্রহ করতে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের স্বীকার হওয়া সাংবাদিকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন সংবাদ প্রকাশ না করে থানায় জিডি করেছে। এ নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায় এরা আদৌ সাংবাদিক কিনা।
এর আগে বহুলী ইউনিয়নের হরিণাহাটা দাখিল মাদ্রাসার সুপারের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে এই চক্রটি।
মাদ্রাসার সুপার ফরিদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, লিটন মাদ্রাসায় গিয়ে হট্টগোল করে। পরে শুনি আমার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। পরবর্তীতে ইউনিয়নের মুরুব্বিদের নিয়ে বিষয়টা মীমাংসা করা হয়। টাকা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জানান কিছু টাকা দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও আলমপুর বাজারে মাংস বিক্রেতার সাথেও এমনটি করে মিমাংশা করে নেয় বলে জানা যায়।
এসব বিষয়ে জানতে ওই চক্রের সদস্য লিটনের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনি যে ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন করলেন সেটা ফোনে বলার সিস্টেম নাই। কিন্তু সাংবাদিকতায় বিভিন্ন বিষয়ে লেখাপড়া করার আছে। এটার একটা পয়েন্ট আছে। আপনারা যে ব্যাপারটা নিয়ে উড়তেছেন সেটা অন্য রকম বিষয়। এত উড়া ভালো না। আমিও উড়তে চাই না। কেউ যদি আশেপাশে থেকে উড়ে সেটা আমার দোষ না। এখন উড়ে এসে কোথায় এসে পড়বে। মাটিতে পা থাকবে কি না উড়ে নিচে পড়বে কিনা এটাওতো দেখা লাগবে।
দৈনিক আলোর জগৎ এর স্টাফ রিপোটার পরিচয় দেওয়া জাহিদুল হককে ফোন দিয়ে থানায় জিডি করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ২নং পুলিশ ফাড়ির এএস আই জুয়েল বলেন, রিপন নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন সাংবাদিকরা। বাদী সাংবাদিক হওয়ায় আমরা ওই শিক্ষককে বিষয়টি মিমাংশা করে নিতে বলেছিলাম। পরবর্তীতে তারা আপোষ মিমাংশা করে আমাদের কপি দিয়েছে। টাকা নিয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, এই প্রতারকচক্রের বিষয়ে আমি অবগত নই। আপনারা সাংবাদিক, বিষয়টা আপনারা দেখলেই ভালো হয়।
What's Your Reaction?






