সিরাজগঞ্জে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১১ সদস্য গ্রেপ্তার

Dec 30, 2024 - 18:04
 0  1
সিরাজগঞ্জে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১১ সদস্য গ্রেপ্তার
ছবি : সংগৃহীত

র‌্যাব ও পুলিশ পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিরাজগঞ্জ পুলিশ। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তারকৃত ১১ জন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাতিয়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে জীবন পারভেজ রেজা (৪৭), একই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে বাচ্চু মিয়া (৪৭) ও মৃত তুফান মণ্ডলের ছেলে রবিউল করিম (৪৫), মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার করতল গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে আবজাল মিয়া উজ্জ্বল (৪০), ঝালকাঠির নলছিড়ি থানার জুরকাঠি গ্রামের মৃত. আব্দুল খালেকের ছেলে মো. জয় (৪০), চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার সাতবাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন মিয়া (৪০)।

শেরপুরের শ্রীবরদি থানার ধাতুয়া গ্রামের মৃত. সৈয়দুল রহমানের ছেলে মো. সুমন (৪৭), পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বড়মাছুয়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে শাহাদাত হোসেন (৫৫), জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার মানিকপাড়ার মৃত. আনারুলের ছেলে মো. আপেল (৩৬), পাবনার চাটমোহর থানার নবীন পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত. আবুল হোসেন সরদারের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৪) এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার ভুটাল হাজিবাড়ি গ্রামের আব্দুল রহিমের ছেলে মোস্তফা কামাল জয় (৪৭)।

জানা গেছে, এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের দুই কর্মীকে র‌্যাব পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লুট করে ডাকাতরা। এ ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একটি টিম গঠন করা হয়। টানা ১৭ দিন ধরে তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে ১১ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও জানা গেছে, তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তল, একটি মাইক্রোবাস, একটি মোটরসাইকেল, এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, দুটি র‌্যাবের পোশাক, একটি ওয়াকিটকি সেট, ১৭টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। এ ছাড়া লুট হওয়া ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের কিছু টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর মেসার্স মীর ট্রাভেলস্ নামক ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাস্টার এজেন্ট ব্যাংক থেকে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে উল্লাপাড়ার মোহনপুর ডাচ্-বাংলা এজেন্ট আউটলেট ও কয়ড়া ডাচ্-বাংলা আউটলেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন কর্মচারী মামুনুর রশিদ ও মো. জোনায়েদ রহমান মিরাজ। তারা মোটরসাইকেলযোগে উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজরোড এলাকায় পৌঁছলে র‌্যাবের পোশাক পরা ডাকাত দলের সদস্যরা মাইক্রোবাস ঠেকিয়ে তাদের পথরোধ করে। এরপর টাকাসহ তাদের জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরায়। এক পর্যায়ে মারধর করে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের হামকুড়িয়া এলাকায় দুজনকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে চলে যায়। ঘটনার পর অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে তারা।

ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও ডাকাতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমানের তত্ত্বাবধানে সহকারী পুলিশ সুপার (কামারখন্দ সার্কেল) মো. আদনান মুস্তাফিজ, সহকারী পুলিশ সুপার (উল্লাপাড়া সার্কেল) অমৃত সূত্রধর ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মো. একরামুল হোসাইনকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের টিম গঠন করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডাকাতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর তিন দিন ধরে ঢাকা, গাজীপুর, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা নিজেদের আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য বলে স্বীকার করে। তারা র‌্যাব ও পুলিশের পরিচয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে ডাকাতি করে। গ্রেপ্তার ডাকাত মো. রবিউল করিম শাহজাদপুর ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে চাকরি করে। তার দেওয়া তথ্যে অন্যান্য ডাকাতরা মেসার্স মীর ট্রাভেলস নামের ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংককে টার্গেট করে ১২ ডিসেম্বর উল্লাপাড়ায় অবস্থান করে।

জিয়াউর রহমান বলেন, সন্ধ্যায় এজেন্ট ব্যাংক কর্মী মামুন ও মিরাজ টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলযোগে রওয়ানা হয়। এমন তথ্য পেয়েই মাইক্রোবাসে থাকা র‌্যাবের পোশাক পরা ডাকাত দল মোটরসাইকেলটির পথরোধ করে এজেন্ট ব্যাংকের দুই কর্মীকে টাকাসহ গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর তাদের মারধর করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার সবাই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। এদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow