স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে সকলে মিলে : তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা আন্দোলন করেছি, বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন করেছেন। তবে বিএনপির একক আন্দোলনে আন্দোলন সফল হয়নি।
আরও অনেকগুলো রাজনৈতিক দল, সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রে নেমে এসেছিল বলেই আন্দোলন সফল হয়েছে। তার মানে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে সকলে মিলে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারকে খেদিয়ে দিয়েছে, বিদায় করেছে, পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে সকলের মিলিত প্রচেষ্টায়, লক্ষ্য কোটি মানুষের মিলিত প্রচেষ্টায়। ঠিক সেইভাবে পরবর্তীতে দেশকে গড়তে হলে বিএনপি শুধু একা পারবে না। দেশকে গড়তে হলে পুনর্গঠন করতে হলে আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দল মত নির্বিশেষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। যেভাবে জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনের সময় দল মত নির্বিশেষে সবাই রাজপথে নেমে এসেছিল, ঠিক সেইভাবে আমাদের মিলে দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে।
রোববার (০৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের বান্দরোডস্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি দেওয়া সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
কর্মশালায় উপস্থিতি নেতাদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যদি আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে পুনর্গঠন করতে হয় তাহলে এখানে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে আপনাদের অর্থাৎ বিএনপিকে পালন করতে হবে। কথায় কথায় অনেকেই বলে থাকেন, দেশে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। কাজেই এই যে মানুষের আস্থা, বিএনপির সামনে যে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা, এটিকে সফল করা সম্ভব একমাত্র আমরা যদি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত থাকবেই, থাকতে পারে। আমাদের ৩১ দফাই শেষ না, এটি কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ না যে, এটিকে পরিবর্তন করা যাবে না। অবশ্যই এখানে নতুন জিনিস ইনক্লুড করা যাবে। কোনো ব্যক্তি, কোনো সংগঠন, কোনো দল যদি ভালো প্রস্তাবনা দেয় অবশ্যই সেটি আমরা গ্রহণ করব। কিন্তু আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয় বিএনপি একা পারবে না, সবাইকে সাথে নিয়ে করতে হবে। এজন্য আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলেছি। আমরা আন্দোলনরত যে দলগুলো ছিলাম, একসাথে আমরা আন্দোলন করেছি, আমরা চাই সকল দলকে নিয়ে এমন একটি সরকার গঠন করতে যেখানে সব মানুষ তাদের মতামত রাখতে পারবেন এবং সকলে মিলে কাজ করতে পারবেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার আমার মতো সরাসরি রাজনীতি করছি, মিছিল-মিটিং করছি; সমাজে এরকম অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা সরাসরি হয়তো রাজনীতিতে জড়িত নন কিংবা জড়িত হতে চান না। কিন্তু দেশের জন্য তারা কাজ করতে চান, তাদের বক্তব্য রাখতে চান, মতামত রাখতে চান, দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে চান। এরমধ্যে হতে পারে সাংবাদিক, চিকিৎসক, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সেইজন্য ৩১ দফার মধ্যে আমরা উচ্চকক্ষ কথাটি বলেছি। যাতে এরকম যারা আছেন তাদের উচ্চকক্ষে স্থান দিতে পারি, তাদের মতামত নিতে পারি, জানতে পারি এবং তারাও ভূমিকা রাখতে পারেন।
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার যেরকম ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব জায়গাতে বিভেদ তৈরি করে দেশের ব্যালেন্সটাকে নষ্ট করে দিয়েছিল। আমরা চাচ্ছি দেশকে পুনর্গঠন করতে, স্বাভাবিক করতে। দশতলা একটি বিল্ডিং তৈরি করতে অনেক শ্রমিকের অনেক পরিশ্রম লাগে, কিন্তু সেটি ভেঙে ধুলোর সাথে গুঁড়িয়ে দিতে একজন মানুষই যথেষ্ট। এরকম সবকিছু গড়তেই অনেক মানুষের প্রয়োজন হয়। ৩১ দফার আলোকে অবশ্যই আমরা দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই কিন্তু দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মানুষের আস্থা আছে বিএনপির প্রতি, কিন্তু এ আস্থাকে ধরে রাখতে হবে। আর সেই আস্থাকে কে ধরে রাখবে? আমি একা পারব না, বরিশাল বিভাগের মঞ্চে সেলিমা আপা বসে আছেন, তিনিও একা পারবেন না, আমি সেলিমা আপা মিলেও পারব না। কিন্তু সকলে মিলে যেমন দেশকে পুনর্গঠন করতে পারব এবং আস্থাকে ধরে রাখতে হলে প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমি বা কয়েকজন সিনিয়র নেতা মিলে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারব না। বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা ধরে রাখতে হলে সকলকে মিলে চেষ্টা করতে হবে।
উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফা শুধু বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য নয়, এটি অবশ্যই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। আজ এখানে যারা এসেছেন তারা নেতা হিসেবে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। অতএব আপনারা বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব করেন, বিএনপির অ্যাম্বাসেডর আপনারা। সহকর্মীবৃন্দ বিভাগ থেকে জেলার নেতৃবৃন্দকে এখানে রেখেছি, এখন আপনাদের অধীনস্ত যতগুলো ইউনিট আছে, সেখানে ছোট ছোট কর্মশালা করতে হবে। নেতাকর্মীকে এডুকেট করতে হবে, আপনারা যা জানলেন, যা শিখলেন, যা বুঝলেন একথাগুলো তাদের বলতে হবে। এরপরে তারা পৌরসভা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পাড়ামহল্লা সর্বত্র দেশের মানুষের কাছে বিএনপির এই বক্তব্যগুলো নিয়ে যাবে।
বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ৩১ দফা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বিএনপির বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলী, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ।
What's Your Reaction?