১৫ সেনা কর্মকর্তা আটক থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে : চিফ প্রসিকিউটর

Oct 12, 2025 - 22:39
 0  3
১৫ সেনা কর্মকর্তা আটক থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে : চিফ প্রসিকিউটর
ছবি : সংগৃহীত

গুমের মামলায় সামরিক হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সত্যিই যদি আটক করা হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, এটাই আইনের বিধান। এরপর সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। তবে হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়ে আইনি কোনো মতামত চাইলে দেওয়া হবে। 

রোববার ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। 

তাজুল ইসলাম বলেন, সেনা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। 

সামরিক হেফাজতকে গ্রেপ্তার বা আটক হিসেবে গণ্য করা যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালে না আসা পর্যন্ত আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না। আদালতের বাইরে যা ঘটছে, মিডিয়ায় যা এসেছে সেটা আমি আমলে নিতে পারি না। এবং তা ব্যাখ্যা করা আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। 

তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়া স্বাধীনভাবে চলবে এবং সবাইকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী লোকদের গুম করে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ ২৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ৫টি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তার করে হাজির করতে আগামী ২২ অক্টোবর দিন ধার্য রাখা হয়।

এরপর শনিবার ঢাকায় আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা পরিবার থেকেও আলাদা থাকছেন। তবে একজন এখনও পলাতক। সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনও হাতে পায়নি সেনাবাহিনী। পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

একদিন পর রোববার তাজুল ইসলাম বলেন, সংবিধান, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ এবং আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আদালতে হাজির না করে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা যায় না। আদালত বিশেষভাবে অনুমতি দিলে সেই সময়ের বাইরে আটক রাখা যায়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ একটি বিশেষ আইন, যা বিশেষভাবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনারি ফোর্সের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) বিচারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই আইনে যে অপরাধগুলো বিচার করা হচ্ছে, তা বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। এমনকি সেনা আইন, নৌবাহিনী আইন বা বিমানবাহিনীর যে নিজস্ব আইন আছে, সেখানেও নেই। এসব বিচার করার ক্ষমতা শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আছে।
 
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ৪৭(৩) এবং ৪৭(ক) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার করার জন্য কোনো আইন প্রণীত হলে, তা সংবিধানের অন্যান্য বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও সেই আইনই প্রাধান্য পাবে। 

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আইনটি সুরক্ষিত এবং শক্তিশালী। তাই এই আইনের কোনো ধারা সুপ্রিম কোর্টসহ অন্য কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। এমনকি এ নিয়ে দায়ের করা রিট আবেদনও গ্রহণযোগ্য নয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow