অনাস্থায় ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বার্নিয়ে সরকারের পতন
ফ্রান্সের আইনপ্রণেতারা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব পাস করেছেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়েককে তার সরকারসহ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর কাছে পদত্যাগ করতে হবে।
বুধবার (৪ নভেম্বর) পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আইনপ্রণেতারা এই অনাস্থা প্রস্তাব পাস করেন। এ কারণে বার্নিয়েককে সরকার গঠনের তিন মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করতে হচ্ছে।
অনাস্থার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির দেশটি আরও গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হলো। একই সঙ্গে দেশটির আইন প্রণয়ন ক্ষমতা এবং বিপুল বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্যও বিপদে পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি বন্ড ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এর আগে ফ্রান্সে বাজেট পাস নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পার্লামেন্টে অধিকাংশ আইনপ্রণেতাদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বার্নিয়ে সরকার সংবিধানের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে বাজেট পাস করেন। যার ফলে সরকার চাপে পড়ে।
বাজেট পাসের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় উগ্র ডানপন্থি এবং বামপন্থি বিরোধী আইনপ্রণেতারা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যা ৩৩১টি ভোটে পাস হয়। এর ফলে ১৯৫৮ সালের পর ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রে সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী সরকার হবে বার্নিয়ের সরকার।
অনাস্থা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে সংসদে বলেন, বাজেট ঘাটতির বিষয়টি অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে দূর হবে না। বরং এটি পরবর্তী সরকারের জন্যও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে, বামপন্থি ফ্রান্স আনবোয়েড (এলএফআই) দল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
উগ্র ডানপন্থি নেতা মেরিন লে পেনের দলও বার্নিয়ের পতনে আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘আমি ম্যাক্রোঁর পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছি না, তবে প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ বাড়বে। তিনি তার সিদ্ধান্ত নেবেন।’
ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু সতর্ক করেছেন যে, এই রাজনৈতিক অস্থিরতা ইউক্রেনের প্রতি ফরাসি সমর্থনকে প্রভাবিত করতে পারে।
এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। এমনটি জানিয়েছে এলিসি প্রাসাদ।
এখন ম্যাক্রোঁকে দ্রুত নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংসদে ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় নতুন প্রধানমন্ত্রীকেও সংসদে আইন পাস করানোর ক্ষেত্রে বার্নিয়ের মতো একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
ফ্রান্সে বর্তমানে যা ঘটছে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও দুর্বল করছে। যেখানে ইতোমধ্যে জার্মানির সরকারের পতন ঘটেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার কিছু আগে এই রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স
What's Your Reaction?