সাড়ে ৩ বছর পর কারামুক্ত হলেন বাবুল আক্তার

Dec 5, 2024 - 15:48
 0  4
সাড়ে ৩ বছর পর কারামুক্ত হলেন বাবুল আক্তার
সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। ছবি : সংগৃহীত

উচ্চ আদালতে জামিনের আদেশের পর অবশেষে কারামুক্ত হয়েছেন স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। বিষয়টি যমুনা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহিম।

তিনি বলেন, বাবুল আক্তারের জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার বিকেলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালের ১২ মে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হন বাবুল আক্তার। এরপর থেকে কারাগারে ছিলেন তিনি।

দীর্ঘ এই সময়ে বেশ কয়েকবার জামিন আবেদন করলেও আদালত বার বার নামঞ্জুর করেন। সবশেষ গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। এরপর ১ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারের জামিনের আদেশ বিচারিক আদালত অর্থাৎ তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেওয়া হয়। ওইদিন বিকেলে জামিনের আদেশ কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু জামিন স্থগিতের আবেদন করা হবে বলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।

পরে জানা যায় বাবুল আক্তারের জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন তার শ্বশুর অর্থাৎ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বাবুল আক্তারের জামিন বহাল রাখেন। অর্থাৎ স্থগিত করেননি।

চেম্বার আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। মিতুর বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।

শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত। ফলে বাবুল আক্তারের মুক্তিতে আর আইনগত বাধা নেই।

বাবুল আক্তারের চট্টগ্রামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবুল আক্তারের মুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা আগেও ছিল না। রোববারই তাকে জামিন দেওয়া যেত। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ অকারণে বিলম্ব করেছে। যেটি দণ্ডবিধি আইনের ৩৪২ ধারায় অপরাধ। আমরা এটি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে আইনগত নোটিশ দিয়েছি। এখন বাবুল আক্তারের পরিবারের কেউ যদি চায়, সেক্ষেত্রে আমরা আদালতে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করব।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

তবে মামলাটিতে পরে বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ফলে ২০২১ সালের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২য় মামলার বাদী হন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজি আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন দুটোই খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই।

তবে পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার আর দরকার নেই মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আর প্রথম মামলাটি চলমান রাখতে বলা হয়, যেটির বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার নিজে। এ ক্ষেত্রে বাবুল আক্তার যেহেতু আসামি হয়ে গেছেন তাই ভিকটিম পরিবারের পক্ষে মিতুর বাবাকে এই মামলায় বাদী হিসেবে বিবেচনার জন্য বলেন আদালত। 

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গত বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow