প্রকল্প শুরু হতেই শত কোটি টাকা পিডির পকেটে, দুর্নীতির বরপুত্র মঞ্জুর আলী

Oct 8, 2025 - 00:49
 0  46
প্রকল্প শুরু হতেই শত কোটি টাকা পিডির পকেটে, দুর্নীতির বরপুত্র মঞ্জুর আলী
ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত প্রকল্প রেজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (RUTDP) - শুরু হতেই দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা মোঃ মঞ্জুর আলী নানা কৌশলে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ, কনসালটেন্ট ফার্ম ও ইন্ডিভিজুয়াল কনসালটেন্ট নিয়োগ, অফিস সজ্জা, ক্রয়-বিক্রয়, এমনকি প্রকল্পের উদ্বৃত্ত অর্থ পর্যন্ত নিজের পকেটে ভরেছেন তিনি।

সূত্র জানায়, প্রকল্পে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৩৫০ জনকে পদে বসানো হয়েছে। প্রতিটি পদে গড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়েছেন তিনি। এই জনবলের বড় অংশ এসেছে দিনাজপুর ও আশপাশের এলাকা থেকে। পিডির ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোসেন, পিডির আত্মীয় কম্পিউটার অপারেটর মনির হোসেন ও ছোট ভাই রাজু সরাসরি এই নিয়োগে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, মনোয়ার প্রায় দুই শতাধিক, মনির ৫০ জন ও রাজু একশাধিক প্রার্থী সরবরাহ করেছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্ধারিত ঘুষের বাইরে অতিরিক্ত অর্থও নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুযায়ী কনসালটেন্ট ফার্ম খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, পিডি মঞ্জুর আলী ২০% কমিশন নিয়ে চারটি কনসালটেন্ট ফার্ম - ইফতিশা, অ্যাকুয়া কনসালটেন্সি, ডেপকো ও ডিপিএম-কে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। টেন্ডারে জমা দেওয়া সিভি বা প্রস্তাবনার কাউকেই বাস্তবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং পিডি নিজেই মনোনীত জনবল নিয়োগ দিয়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করেছেন।

ইন্ডিভিজুয়াল কনসালটেন্ট পদগুলোর বেতন ৩ লাখ থেকে ৫.৫ লাখ টাকা। এসব পদ পেতে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে কিছু “কাল্পনিক পদ” রাখা হয়েছে - যেখানে কোন লোক নিয়োগই নেই, কিন্তু সেই পদগুলোর ৭৫% বেতন পিডির পকেটে আর ২৫% সংশ্লিষ্ট ফার্মে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পিডি মঞ্জুর আলীর বাসার কাজের মেয়ে, দারোয়ান ও কেয়ারটেকারের বেতনও প্রকল্প থেকে দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রকল্পের বিভিন্ন পদে “নিয়োগপ্রাপ্ত” হিসেবে দেখানো হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি কোভেনা’র সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন পিডি মঞ্জুর আলী। নিয়মিত উপঢৌকন, উপহার, খাদ্যসামগ্রী ও বিদেশ যাতায়াতের টিকিট দিয়ে তাকে ‘কব্জায়’ রেখেছেন বলে দাবি সূত্রের।

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো — RUTDP’র সর্বোচ্চ বেতনের কনসালটেন্ট পদটি এখনও শূন্য।
সূত্র জানায়, ৯ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার পর পিডি মঞ্জুর আলী নিজেই ঐ পদে নিজেকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

যেখানে অন্যান্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা তাদের নামের পাশে “অতিরিক্ত দায়িত্ব” উল্লেখ করেন, সেখানে মঞ্জুর আলী নিজের নামের সীলে সরাসরি ‘অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী’ লিখে ব্যবহার করছেন। এমনকি প্রকৃত প্রধান প্রকৌশলীও যেখানে “অতিরিক্ত দায়িত্ব” ব্যবহার করেন, মঞ্জুর আলী নিজেকে স্থায়ী প্রধানের মতো পরিচয় দিচ্ছেন।

ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে একাধিক ফ্ল্যাট, মধুমতি মডেল টাউনে কয়েকটি প্লট, এবং বনগাঁ-বিরুলিয়ায় বিস্তীর্ণ জমিসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

সূত্রের দাবি— RUTDP যেন পিডি মঞ্জুর আলীর ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’। এই প্রকল্পের প্রতিটি পদ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত, এমনকি ভবিষ্যৎ নিয়োগও তার পারিবারিক ব্যবসার অংশে পরিণত হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow