বিচার-সংস্কার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না : নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একসঙ্গে চাই। বিচার আর সংস্কার ছাড়া বাংলার জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না। যারা বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায়, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচন ও ভোটাধিকারের পক্ষে সত্যিকারের লড়াই করে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্ব।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে যশোর ঈদগাহ মোড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রার পথসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করতে দিবো না। আমরা চাই পুলিশ নিরপেক্ষভাবে জনগণের পক্ষে কাজ করবে। পুলিশ কোন দলের অনুসারী হবে না। সরকারি দলের অনুসারীও হবে না। আমরা চাই আমলাতন্ত্র প্রশাসন কোন দলের অনুসারী হবে না। কোন সরকারি দলের নেতার উপর নির্ভর করবে না। তাদের মেধা যোগ্যতা অনুযায়ী প্রমোশন নির্ভর করবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, কোনো দুর্নীতিবাজ, দখলবাজকে ভয় পাবেন না। একটি রাজনৈতিক দল দাবি করে কোটি কোটি মানুষের দল নাকি তাদের। এই কোটি কোটি , লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের দেখায়েন না। আমরা ফ্যাসিবাদের আমলে দেখেছি কত মানুষ ছিল তাদের। সেই মানুষেরা কত আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ১০জন মানুষ দাঁড়িয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১০-২০ জন মানুষ নিয়েই আন্দোলন শুরু করেছিলাম। পরে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ আবাবিল পাখির মত আমাদের সঙ্গে রাজপথে দাঁড়িয়েছিল। ফলে মানুষের হিসেব আমাদের দেখিয়েন না। যদি নৈতিকতার সাথে থাকেন, ইনসাফের সাথে থাকেন, তাহলে একজন মানুষ লক্ষ মানুষের সমান শক্তিশালী হয়ে যান। ইনশাল্লাহ আমরা সেই একজন মানুষ হতে চাই। আমরা দায় ও দরদের ইনসাফ ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র গড়তে চাই।
যশোর জেলার দীর্ঘদিনের সমস্যা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, যশোরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ চালু হয়নি। সেখানে আইসিইউ চালু হয়নি। যশোরের মানুষকে খুলনায় যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। আমরা চাই যশোরের মানুষ যশোরেই সেবা পাবে। আমরা চাই যশোরের মানুষ যশোরেই শিক্ষা পাবে। আমরা ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কথা জানি। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। সেই সমস্যার কথা জানি। এই সমস্যা দূর করার দায়িত্ব নিতে হবে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দকে। আমরা বেনাপোলের দুর্নীতি, মাদক কারবারের কথা জানি। দুর্নীতি মাদকের বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্র-জনতাকে দাঁড়াতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে যেমন আপনার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমনি যশোরসহ সারাদেশের মানুষের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তর অঞ্চল) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সদস্য সাকিব শাহরিয়ার ও খালিদ সাইফুল্লাহ জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ।
আখতার হোসেন বলেন, সংস্কারের আলাপ টেবিলে আছে, রাজপথে নামাতে বাধ্য করবেন না বলে। বাংলাদেশে প্রত্যেকবার আন্দোলন হয়, জীবন দেয় ছাত্ররা, রক্ত দেয় ছাত্ররা আর কিছু রাজনৈতিক দল ফায়দা লুঠে। এসব রাজনীতিক দল ভেবেছিলো আন্দোলনের পর আমরা ঘরে ফিরে যাব। কিন্তু বাংলাদেশে গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাংলাদেশকে যে সংস্কার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম; সেটা না করে আমরা ঘরে ফিরবো না। আমরা যখন সংস্কার নিয়ে কথা বলছি, তখন এসব রাজনীতিক দলদের ভেতর ভয় ঢুকে গেছে। আমরা শাপলা মার্কার কথা বলেছি তারা ভুলভাবে জাতীয় প্রতীক শাপলা ভেবে আমরা যেন শাপলা প্রতীক না পায়; সেটার ষড়যন্ত্র করছে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আখতার হোসেন বলেন, আমরা যখন বাংলাদেশে সংস্কারের কথা বলছি; তখন শুধু তারা নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু হাসিনার সিস্টেমই যদি থাকে, হাসিনার সংবিধানে থাকে, হাসিনার বিচার বিভাগই থাকে, হাসিনার প্রশাসন থাকে তাহলে আমাদের নতুন করে যে বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন; সে স্বপ্ন স্বপ্নই থাকবে। সেটা কখনো বাস্তবায়ন হবে না।
সংস্কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা বলছি সংস্কারে আলাপ টেবিলে আছে, সংস্কারের আলোচনা যদি আপনারা টেবিলেই না হলে; বাংলাদেশের মানুষ যখন রাজপথে নেমেছিল; এই সংস্কারের দাবিতে তারচেয়ে বহু গুনে রাজপথে নেমে আসবে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়, কিন্তু তাদের দাদাগিড়িকে মানবে না।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলি আর মন খারাপ করে একটি দল। আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্বিচারিতার কথা বলি কিন্তু মন খারাপ করে একটি দল। আমরা টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে কথা বলি, গোস্মা করে একটি রাজনৈতিক দল। যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলে আছেন তারা গোস্বা হবেন না। চাঁদাবাজ কিংবা টেন্ডারবাজ যদি না হন আপনাদের গায়ে তো লাগার কথা না। আপনারা কি সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন? যদি গোস্বা করেন তাহলে ধরে নেব আপনারাই সংস্কারে বাধা দিচ্ছেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে যশোর শহরের একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এনসিপি যশোর জেলা শাখা। সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুম ও ডা. তাসনিম জারা।
What's Your Reaction?






