বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে পূর্ণাঙ্গ কমিশন ঘোষণা
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদঘাটন এবং অপরাধীদের চিহ্নিতকরণে জাতীয় স্বাধীন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে (অব.) এই কমিশনের সভাপতি করা হয়েছে। সদস্যরা হচ্ছেন– মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক (অব.), মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ যুগ্মসচিব (অব.), ড. এম. আকবর আলী ডিআইজি (অব.), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশনে একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। সেহেতু পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের সহিত জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদ্ঘাটন, ঘটনায় হওয়া দুটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত, ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার সহযোগী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ঘটনা সংঘটনকারী এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় ও অপরাধীদের চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি হইবে নিম্নরূপ– ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদ্ঘাটন করা; ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি/ গোষ্ঠী/ সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/ বিভাগ/সংগঠন ইত্যাদি চিহ্নিতকরণ।
হত্যাকাণ্ডের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে/পরে সংঘটিত অপরাপর অপরাধের স্বরূপ উদ্ঘাটন, দায়ী ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন চিহ্নিত করা এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা বা ঘটনা ঘটাইতে সহায়তাকারী অন্যান্য দেশি-বিদেশি ব্যক্তি/ গোষ্ঠী/ সংস্থা/ প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/ সংগঠনের সম্পৃক্ততা নিরূপণ এবং দোষীদের চিহ্নিতকরণ; হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন চিহ্নিতকরণ।
হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধে ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তগণের দায়/অপরাধ অক্ষুন্ন রেখে সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এমন প্রকৃত অপরাধীদেরকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যেকোনো স্থান পরিদর্শন এবং সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। কমিশন, প্রয়োজনে, উপযুক্ত যেকোনো ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। কমিশন তদন্তকার্য সম্পন্ন করে এই প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করিবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সকল প্রকার সহায়তা করবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে এবং কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, কমিশনের প্রধান ও সদস্যরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সরকারি পদমর্যাদা, বেতন/ সম্মানি ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবেন; তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন প্রধান বা কোনো সদস্য অবৈতনিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে না চাইলে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন গ্রহণ করতে পারবে। এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে।
What's Your Reaction?