"শিষ্টাচারের রাজনীতি" : হাফিজুর রহমান কিরন

রাজনীতিতে এখন প্রতিহিংসা, আক্রমণ, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অসহিষ্ণু প্রবনতা বেড়েছে ভীষণ ভাবে। পারস্পরিক সন্মান ও শ্রদ্ধাবোধ যেন আজকে বিলুপ্তির পথে।
রাজনীতির মাঠে এখন কুৎসিত বিকৃত নোংরামি এবং কাদাছোড়াছুড়ির জয়জয়কার। সহনশীলতা শব্দটি যেন বিলুপ্ত প্রায়। একপক্ষ অন্য পক্ষকে অশালীন ভাষায় আক্রমন করা এমনকি প্রয়াত ব্যক্তিদের অসম্মান করার একটা রীতি আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু এটি প্রকৃত রাজনৈতিক নয়। এটা রাজনীতির শিক্ষাও নয়।রাজনীতি হলো রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল।
রাজনৈতিক নেতা ও কর্মিরা সমাজের আদর্শ। যারা সমাজকে পথ দেখান। একটি রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে তার পথ নির্দেশ নির্মান করেন। কাজেই রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে দেশের জনগণ শিখবে এটাই সবার প্রত্যশা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের রাজনীতি এখন যেন প্রতিহিংসার প্রতিযোগিতা, ভিন্ন মতকে খতম করাই যেন আজকের রাজনীতির প্রধান কৌশল।
বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে মতের অমিল থাকবে, বিরোধ থাকবে, কিন্তু এই বিরোধ সহিংসতার পথে পা বাড়াবে না। রাজনীতিতে শিষ্টাচার, প্রতি পক্ষের প্রতি সন্মান, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা অত্যন্ত জরুরী।
ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করা সব বরেণ্য রাজনীতিবিদ এই বৈশিষ্ট্যগুলোর চর্চা করেছেন তাদের জীবনে। এই বৈশিষ্ট্য একজন রাজনীতিবিদকে পরিনত করে, বড় করে এবং আদর্শবান করে তোলে। এই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্যই তাকে জনগণ শ্রদ্ধা ও সন্মান করে। তারা অনুকরণীয় হন। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে রাজনীতিতে যেমন বিভক্তি দেখা যাচ্ছে, বিভক্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিহিংসা।
এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নির্মম ভাবে আক্রমণ, সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করে দেওয়া এবং যে কোন ভিন্ন মত হলেই তাকে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ ভাষায় দমন করা, কখনো কখনো পাশবিক শক্তি প্রয়োগ একটা হিংস্র প্রবনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনীতিতে হিংস্রতা এবং ভাষাজঞ্জানহীন কথাবার্তার প্রবনতা বাড়ছে। একজন প্রতিপক্ষের রাজনীতিবিদকে কি ভাষায় কথা বলতে হবে, ভিন্ন মতের ব্যপারে কি ধরনের শিষ্টাচার দেখাতে হবে, সেই বোধগুলো আমাদের রাজনীতি থেকে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
লেখক : হাফিজুর রহমান কিরন
সাবেক সভাপতি রহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
What's Your Reaction?






