রাজশাহীতে বিচারকের ছেলে হত্যাকারী কে এই লিমন

Nov 14, 2025 - 21:07
 0  3
রাজশাহীতে বিচারকের ছেলে হত্যাকারী কে এই লিমন
ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার লিমন মিয়া (৩৫) গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাসিন্দা।

পারিবারিক যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্রে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারের সঙ্গে লিমনের পরিচয় তৈরি হয়েছিল বলে জানা গেছে। দুজনই একই জেলার হওয়ায় এই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।

ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া এইচ এম ছোলায়মান হোসেন শহীদের ছেলে লিমন। এইচএসসি পরীক্ষার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সাত-আট বছর চাকরি করে ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী ছাড়েন এবং বালু-বাণিজ্যে জড়ান।

লিমনের বাবা ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে লিটন কোনো রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন না বলে জানান তার বাবা।

পারিবারিক সূত্রমতে, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে লিমন দ্বিতীয়। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। সাত-আট বছর পর ২০১৮ সালে চাকরি ছেড়ে ফুলছড়ির গজারিয়া হাট ও বালাসী ঘাট এলাকায় বালুর ব্যবসাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যে জড়ান। শেয়ার ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন তিনি।

স্থানীয়দের মতে, লিমন ব্যবসার পাশাপাশি ‘জিয়া সাইবার সোর্স’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

লিমনের বাবা শহীদ মিয়া বলেন, ‘চাকরি ছাড়ার পর থেকেই ছেলের সঙ্গে পরিবারের দূরত্ব তৈরি হয়। সে এলাকায় ব্যবসা করত। এক মাস আগে চোখ দেখানোর কথা বলে ঢাকায় যায়, তারপর আর তার খোঁজ পাইনি।’

লিমন রাজশাহীতে কেন গিয়েছিলেন কিংবা বিচারকের পরিবারের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক- এসব বিষয়ে পরিবারের কেউ কিছু জানেন না বলে দাবি বাবার। তবে লিটন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী তার বিচার হোক- সেটি চান তিনি।

এদিকে বিচারকের পারিবারিক সূত্র জানায়, বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারের বাবার বাড়ি গাইবান্ধা শহরের এটেস্টেটপাড়ায়। একই জেলার বাসিন্দা বলে তাসমিন নাহারের সঙ্গে লিমনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিচয় ও সম্পর্কের জেরে লিমন প্রায়ই তার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাইতেন। সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকবার হুমকিও দেন। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর সকালে তাসমিন নাহারের মেয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে তিনি পুরো পরিবারকে হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

গত ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য লিমন মিয়া বারবার আর্থিক সাহায্য না পেয়ে তাকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।

অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমন এক ভিডিওতে দাবি করেন, বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে পরিচিত হন। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের ‘সম্পর্ক’ ছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর ডাবতলা এলাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবদুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন লিমন। এ সময় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার (৪৪) গুরুতর আহত করা হয়।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা আর্থিক লেনদেনের বিষয় থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow