কয়রায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চিংড়ি ঘের দখলের অভিযোগ

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
খুলনার কয়রায় বিএনপি নেতা এম এ হাসানের বিরুদ্ধে চিংড়ি ঘের দখলের অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ মার্চ উপজেলার মঠবাড়ি মৌজায় বিরেন মন্ডলের ৭৫ বিঘা জমির ওই চিংড়ি ঘেরটি দখলে নেয় এম এ হাসানের লোকজন।
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাননি ওই ঘের মালিক। বিরেন মন্ডল জানান, এক মাস আগে ১০-১২টি মোটরসাইকেলযোগে কয়রা সদর থেকে লোকজন এসে প্রথমে তাঁর ঘেরের বাসা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজন তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তারা বিএনপি হাসানে সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এ সময় হাসানের সঙ্গে কথা বললে ঘের থেকে বিরেন মন্ডলকে সরে যেতে হবে বলে জানিয়ে দেন।
বিরেন মন্ডল বলেন, আমার ৭৫ বিঘা চিংড়ি ঘেরে ১৫ বিঘার মতো সরকারি ভিপি সম্পত্তি রয়েছে। যা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ডিসিআর রয়েছে। তিনি ওই জমি আমার কাছে ইজারা দিয়েছেন। প্রতি বছর ওই জমি বাবদ টাকা নেন তিনি। বিএনপি নেতা ওই জমি উপলক্ষ করে ৭৫ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন। সেখানে স্থানীয় মানুষের রেকর্ডিও জমিও রয়েছে। সেসব জমি বাৎসরিক টাকা দিয়ে আমি চিংড়ি চাষ করে থাকি। বর্তমানে আমার ঘেরে অবস্থান করছে দখলদাররা। তারা ঘেরের মাছও ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
মঠবাড়ি গ্রামের পঁচা মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, ওই ঘেরে তাঁর পৈতৃক ৬ বিঘা জমি আছে সে জমিও দখল করে নিয়েছে বিএনপি নেতা হাসানের লোকজন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান অভিযোগ করেন, তিনি প্রতি বছর সরকারি রাজস্ব জমা দিয়ে ডিসিআর নবায়ন করেন। চলতি বাংলা সনেও তার নামে ডিসিআর নবায়ন রয়েছে। তারা সব কিছু অমান্য করে গায়ের জোরে জমি দখল করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়রা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, এম এ হাসান জেলা বিএনপি’র আহবায়কের নাম ভাঙিয়ে ঘের দখল, খাল দখল, জমির বিরোধ মীমাংশার নামে হয়রানীসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে ভাগাভাগিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। তাকে থামাতে না পারলে স্থানীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল।
গত ১৭ মার্চ কয়রা উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বিরেন মন্ডলের ঘের দখলের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে খুলনা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মোমরেজুল ইসলাম দখলবাজি থেকে সরে আসতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বক্তৃতা করেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আ’লীগ আমলে তাঁর এক মামা শফিকুল ইসলাম কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। আরেক মামা বাহারুল ইসলাম উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে তাদের ছত্র ছায়ায় অপকর্ম করেছেন। এখন খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুর নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ মুহুর্তে উপজেলা বিএনপি’র কমিটি না থাকলেও তিনি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে এম এ হাসান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক আওয়ামী লীগ নেতা আমার আত্মীয় হলেও দলীয়ভাবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তাছাড়া দখলবাজিতে জড়ানোর অভিযোগও সঠিক নয়। গত ১৬ বছর আমাদের নেতা কর্মীরা বঞ্চিত ছিল। তাদের পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি কারো নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করিনা।
জানতে চাইলে খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে কোন নেতা-কর্মী দখলবাজিতে জড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি স্বচ্ছতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী।
What's Your Reaction?






