দুর্নীতির আখড়া আত্রাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ডা. হ্যাপির বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে কর্মরত ডা. রোকসানা হ্যাপির বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যোগদানের পর থেকে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আত্রাই উপজেলায় কর্মরত আছেন ডা. হ্যাপি। যোগদানের পরপরই করোনাকালীন নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর ১৪ জন কর্মচারীর পোশাকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। জনপ্রতি ১১ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য তিনি তাদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে কেটে নিয়ে বাকি ৮ হাজার টাকা প্রদান করেন।
তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছ টেন্ডার ছাড়া কেটে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট জেনারেটর নামমাত্র মেরামত দেখিয়ে সেই খরচও নয়-ছয় করার অভিযোগ রয়েছে।
ডা. হ্যাপির স্বামীর বিরুদ্ধে হাসপাতালের বিভিন্ন রিপেয়ারিংয়ের কাজ করানো, ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে। তিনি অধীনস্থ ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের ভয়-ভীতি দেখানো ও মারধর করার অভিযোগও আছে। এছাড়াও, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান প্রধান তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকতে পারেন না। অথচ, বদলির আদেশ হওয়ার পরেও ডা. হ্যাপি কোনো এক অদৃশ্য শক্তির জোরে একই স্থানে রয়ে গেছেন।
আত্রাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ডা. হ্যাপি দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া বানিয়ে রেখেছেন। তার যোগদানের পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও ঔষধ আত্মসাৎ করেছেন। চিকিৎসা নিতে আসা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অবহেলিত ও অপমানিত হন। অতি দ্রুত এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অপসারণ ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আত্রাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি উত্তাল মাহমুদ বলেন, একই জায়গায় দীর্ঘদিন কর্মরত থাকায় ডা. হ্যাপি বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তিনি অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে অঢেল সম্পদ গড়েছেন।
অভিযুক্ত আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোকসানা হ্যাপি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘গত অর্থবছরে আমার এখানে খাবারের টেন্ডার নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছে। জামায়াতের তরফ থেকে একটি সুপারিশ ছিল, কিন্তু কোন ভাবে সে কলিফাই হয়নি তাই তারা আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার করছে। সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা এগুলোর কোন ভিত্তি নেই।’’
এ প্রসঙ্গে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘ডা. হ্যাপির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
What's Your Reaction?






