চা পানে নিয়ন্ত্রণ হবে রক্তচাপ

May 21, 2025 - 15:08
 0  2
চা পানে নিয়ন্ত্রণ হবে রক্তচাপ
ছবি : সংগৃহীত

চা না খেলে যেন দিনের শুরুই হয় না! এমন চা-প্রেমী খুঁজলে পাওয়া যাবে দেশের অলি-গলি সবখানে। শুধু চা-প্রেমীই নয়, চা পান করে না এমন মানুষ যেন খুঁজে পাওয়াই দায়। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান ও অর্থনীতি বিভাগের ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, দেশের মানুষ প্রতিদিন ১৪ কোটি ২৮ লাখ কাপ চা পান করেন। অর্থাৎ দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় সবাই দিনে অন্তত কয়েকবার করে চা পান করেন। তাই আজ আন্তর্জাতিক চা দিবস উপলক্ষে চলুন জেনে নেই চায়ের কিছু জানা-অজানা বৈশিষ্ট্য-

চা পানের উপকার-

১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও তারুণ্য ধরে রাখে
অ্যামেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টি শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বজায় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, বিশেষ করে গ্রিন টি ও ব্ল্যাক টি বা রং চা-তে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষিত পদার্থগুলো দূর করে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।

২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
নিয়মিত চা পানে শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড এর পরিমাণ বাড়ে, যা রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ পেশীগুলিকে শিথিল করে। ফলে চা রক্তের নিয়মিত প্রবাহ বজায় রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৩. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
ব্ল্যাক টি বা রং চায়ে থিয়াফ্লাভিন এবং থিয়ারুবিগিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা আপনার শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আপনার খাদ্যতালিকায় নিয়মিত চা থাকলে টা হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া (উচ্চ কোলেস্টেরল) নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৪. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
চায়ের উপস্থিত পলিফেনল, ল্যাকটেজের মতো পাচক এনজাইমকে বাধা দেওয়ার এবং অন্ত্রে গ্লুকোজ (চিনি) গ্রহণকে বিলম্বিত করার ক্ষমতা আছে। ফলে কিছু গবেষণা বলে যে, খাদ্যতালিকায় পলিফেনলের ধারাবাহিক গ্রহণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে কিছু ওষুধের মতোই কার্যকর হতে পারে; তবে, এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

৫. হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক
কিছু গবেষণা বলে চা, বিশেষ করে গ্রিন টি, হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং ফলস্বরূপ ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে এ বিষয়েও বিজ্ঞানীরা এখনো কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি।

৬. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় -
গ্রিন ও ব্ল্যাক টি-তে গুরুত্বপূর্ণ পলিফেনল থাকে, এই ধরণের পলিফেনলগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
চায়ে থাকা পলিফেনল ও ভিটামিন-সি শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে, যা সাধারন সর্দিকাশি ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

৮. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি -
চায়ে ক্যাফেইন ও এল-থিয়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা মস্তিষ্কের সতর্কতা ও একাগ্রতা বাড়ায়। এটি আলঝাইমার ও পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

এ তো গেল সব ভালো ভালো কথা। তবে কোনো ভালো জিনিসও অতিরিক্ত ভালো না। তাই যেনে নিন চা পানের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো, যেন ক্ষতি এড়িয়ে শুধু গুণগুলো উপভোগ করতে পারেন।

চা পানের অপকার-

চা পান করলে খুব বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। তবে যেহেতু কিছু চায়ে উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন থাকে, যেমন ব্ল্যাক টি ও গ্রিন টি, তাই এটি পান করার সময় কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত-

১. ঘুমের সমস্যা
চায়ে থাকা ক্যাফেইন অতিরিক্ত সেবনে অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বিশেষ করে রাতে চা পান করলে এ সমস্যা হতে পারে।

২. পেটের গোলমাল
খালি পেটে চা পান করলে অ্যাসিডিটি, বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের পেটের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর।

৩. রক্তশূন্যতা
চায়ে থাকা ট্যানিন আয়রন শোষণে বাধা দেয়, যা রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাবারের সঙ্গে বা খাবার ঠিক পরেই চা পান না করা ভালো।

৪. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
অতিরিক্ত চা পান করলে ক্যাফেইনের প্রভাবে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

৫. দাঁতের ক্ষয়
চায়ে থাকা ট্যানিন দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে, বিশেষ করে যদি চায়ে চিনি মিশিয়ে পান করা হয়।

চা পান করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে পরিমিত পরিমাণে। দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা পান না করাই ভালো। গর্ভবতী নারী, হৃদরোগী ও যাদের ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের চা পান সীমিত করা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় যদি চিনি ছাড়া বা কম চিনি দিয়ে চা পান করা যায়। তাই চায়ের গুণ বিচার করে চা পান করুন, সুস্থ থাকুন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow