সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনা বন্ধ—ব্যয় কমাতে যেসব পদক্ষেপ
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন দ্রুত করতে উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। একই সঙ্গে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধননীতিও অব্যাহত রাখা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে যানবাহন ক্রয় খাতে বরাদ্দ থাকা অর্থ ব্যয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সরকারি অর্থায়নে বিদেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণও বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত পরিসরে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন’ শিরোনামে চলতি সপ্তাহে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে আগের মতো এবারও সংশোধিত বাজেটে ব্যয় সাশ্রয়ের নীতি অনুসরণ করতে হবে।
এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ কয়েকটি খাতে ব্যয় বন্ধ থাকবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই নীতি মেনে আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটের বরাদ্দসীমার মধ্যেই থাকতে হবে। অতিরিক্ত বরাদ্দের কোনো দাবি জানানো যাবে না।
তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটের সীমার মধ্যে একই ধরনের অন্যান্য খাতের বরাদ্দ সমন্বয় করা যাবে। উন্নয়ন খাতে অব্যয়িত অর্থ কোনোভাবেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
কৃচ্ছ্রসাধননীতির অংশ হিসেবে সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে সীমিত বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। একই সঙ্গে গাড়ি, জাহাজ ও বিমান কেনা বন্ধ থাকবে।
শুধু অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয়ও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্ত সাপেক্ষে ব্যয়ের সুযোগ থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হলেও গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু খাতে সীমিত ছাড় দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সরকারি ব্যয় নানা খাতে বেড়ে গেছে। ফলে কোথায় ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ আছে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে আগামী ডিসেম্বরে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে, বিশেষ করে মার্চে বাজেট সংশোধন করা হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার আগেভাগেই সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।
পরিপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের অগ্রাধিকার খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেট সুষ্ঠু ও সময়মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?

