আত্মসমর্পণের পরও নেপালে ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে মারল বিক্ষুব্ধরা

Sep 10, 2025 - 00:29
 0  1
আত্মসমর্পণের পরও নেপালে ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে মারল বিক্ষুব্ধরা
ছবি : সংগৃহীত

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর কোটেশ্বরে ভয়াবহ সহিংসতায় তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, আত্মসমর্পণের পরও আন্দোলনকারীরা তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রথমে বিক্ষুব্ধরা কোটেশ্বর পুলিশ বিভাগে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর আত্মসমর্পণ করা কর্মকর্তাদের টেনে বাইরে এনে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। তবুও উত্তেজিত জনতা নির্মমভাবে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।

নেপালের পুলিশের সদর দপ্তর (নাক্সাল) এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে এবং ঘটনাটিকে ‘বর্বরোচিত হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সদর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ড রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির ইঙ্গিত বহন করছে।

এদিকে কোটেশ্বরে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার ঘটনা রাজধানীজুড়ে বাড়তে থাকা সহিংসতার মধ্যে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কার্যালয়ে লাগাতার হামলা ও অগ্নিসংযোগ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।

তিন পুলিশ কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে, তবে ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় জনমনে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে নেপালে চলমান বিক্ষোভ ও সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়—যদি সহিংস কর্মকাণ্ড, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত থাকে, তবে রাত ১০টা (স্থানীয় সময়) থেকে সেনাসহ সব নিরাপত্তা সংস্থা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বাধ্য হবে।

নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজারাম বসনেত স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু গোষ্ঠী বর্তমান সংকটকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ নাগরিক ও সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি করছে, লুটপাটে লিপ্ত হচ্ছে এবং অগ্নিসংযোগ ঘটাচ্ছে। যদি এই কর্মকাণ্ড বন্ধ না হয়, তবে নেপাল সেনা ও অন্যান্য সব নিরাপত্তা সংস্থা রাত ১০টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনী জনগণের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্র রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ জন্য নাগরিকদের সেনাবাহিনীর এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।

এ ছাড়া লুট হওয়া অস্ত্র-শস্ত্র ফেরত দেওয়ার জন্যও সেনাবাহিনী আলটিমেটাম দিয়েছে। মুখপাত্র বসনেত বলেন, ‘যারা অস্ত্র লুট করেছে, আমরা তাদের রাত ১০টার মধ্যে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।’

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন—সহিংস পথ পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow