চান্দিনায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকদের সিন্ডিকেট, জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ

Oct 8, 2025 - 01:11
 0  8
চান্দিনায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকদের সিন্ডিকেট, জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ
ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সাব-সেন্টার উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে দোল্লাই নবাবপুরে চালু করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যাবৎ সেখানে সপ্তাহে ২ দিন সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও গত ৪ মাস যাবৎ ওই সেন্টারের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে উপজেলার অন্তত ৬টি ইউনিয়নের জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের সিন্ডিকেটে ওই সাব-সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার দোল্লাই নবাবপুরে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ। এতে বাধ্য হয়েই ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে চান্দিনা উপজেলা সদরে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে হচ্ছে।

তবে দলিল লেখকদের অভিযোগ, মাধাইয়া থেকে নবাবপুর পর্যন্ত সড়কটি ভাঙা-চুরা। যে কারণে দলিল লেখকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাব-রেজিস্ট্রারকে ওই সাব-সেন্টারে কার্যক্রম না করার অনুরোধ জানান।

তাই ৪ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই-নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অস্থায়ী ওই সাব-সেন্টারের কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চান্দিনা উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। অবস্থানের দিক থেকে উপজেলা সদরটি এক প্রান্তে। আর উপজেলা সদর থেকে শেষ প্রান্তের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটিও উপজেলা সদরে অবস্থিত। উপজেলার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন জোয়াগ, বরকরই, দোল্লাই নবাবপুর, গল্লাই ইউনিয়ন সহ মাইজখার ও মহিচাইল ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চান্দিনা উপজেলা সদরে এসে জমি দলিল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৭ সাল থেকে দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সাব-সেন্টার চালু করা হয়। প্রায় ৮ বছর যাবৎ সপ্তাহের প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার ওই সাব-সেন্টারে নিয়মিত দলিল কার্যক্রম সম্পন্ন হতো। ২০২৫ সালের জুন মাস থেকে টানা ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে সড়কের বেহাল দশার অজুহাতে ওই সাব-সেন্টারে যাচ্ছেন না সাব-রেজিস্টার থেকে শুরু করে দলিল লেখকরা। এতে প্রায় ছয়টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জোয়াগ গ্রামের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম জানান, রাস্তা ভাঙা-চুরার অজুহাতে সাব-রেজিস্টার ও দলিল লেখকরা আসতে পারেন না। কিন্তু আমরা যারা দলিল করব, দলিল দাতা, গ্রহীতা, সাক্ষী ও সনাক্তকারীসহ অনেক লোক যাতায়াতের মনে হয় সমস্যা হয় না! তারা (সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলিল লেখকসহ) ৫০ জন যদি চান্দিনা থেকে নবাবপুর না আসেন, আমরা ৫০০ লোক এই বেহাল সড়ক অতিক্রম করে চান্দিনা যেতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দোল্লাই নবাবপুর সাব-সেন্টারের কার্যক্রম চলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। সেখানে বসে কাজ করার জন্য চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত নেই। এখন ডিজিটাল যুগ, কম্পিউটার ছাড়া কার্যক্রমও চলে না। কিন্তু সেগুলো রেখে যে কাজ করব, সেই ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া মাধাইয়া থেকে নবাবপুর সড়কটির বেহাল দশায় যাতায়াতেরও ভীষণ অসুবিধা। তাই চার মাস যাবৎ সেখানে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আমরাই সাব-রেজিস্টার স্যারকে বলেছি।

চান্দিনা উপজেলা সাব-রেজিস্টার মাকসুদুর রহমান জানান, সরকারি নির্দেশেই আমি সপ্তাহে দুইদিন নবাবপুর সাব-সেন্টারে যেতে প্রস্তুত। আমি চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি যোগদান করে বেশ কয়েকদিন সেখানে অফিস করেছি। কিন্তু দলিল লেখকরা সিন্ডিকেট করে সেখানে যেতে রাজি নয়। যে কারণে বাধ্য হয়েই ওই সাব-সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বুধবার (৮ অক্টোবর) থেকে আবারও সেখানে কার্যক্রম চলবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow