প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিতে খসড়া অধ্যাদেশ ঢেলে সাজানোর আহ্বান টিআইবির
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া বিশ্লেষণ করে তাতে পুলিশ কমিশনের বাস্তব স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি সুপারিশসহ খসড়াটি ঢেলে সাজাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় টিআইবি।
টিআইবি জানায়, অধ্যাদেশটি ঢেলে না সাজানো হলে পুলিশ কমিশনের ওপর সরকারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি রয়েছে। পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা, গোয়েন্দা, নজরদারি সংস্থার পেশাগত উন্নতি, কার্যপরিধি স্পষ্টকরণ, মানবাধিকার ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এ সংক্রান্ত আইন, নীতি প্রণয়ন ও সংস্কারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা কমিশনের হাতে দেয়ার দফা সংযুক্ত করা জরুরি। কমিশন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ আইনের জায়গায় দীর্ঘদিন চাপা রাখা 'খসড়া পুলিশ আইন, ২০০৭'- এর ইতিবাচক বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সময়োপযোগী খসড়া প্রণয়ন ও পাশ করানোর জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার দফা যুক্ত করতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হয়নি। তবুও নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া খসড়ায় অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাছাই কমিটি ও কমিশন গঠন, জনবল নিয়োগ, আর্থিক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে। সাতজন সদস্যের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত একজন আমলা ও দুইজন পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করায় কমিশন সাবেকদের আনুগত্যের প্রতিদানকেন্দ্রে পরিণত হওয়াসহ নির্বাহী বিভাগের অধীনে একটি সংস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তমচর্চার আলোকে সাবেক, বর্তমান আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ বাতিল করতে হবে। সে জায়গায় বিচার, আইন, আইনপ্রয়োগ, মানবাধিকার ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক সমন্বয়ে কমিশন গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার স্বার্থে এরকম কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সরকারের অনুমোদনের বিধান বাতিল করে ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কমিশনের হাতে দিতে হবে। এছাড়া প্রেষণে নিয়োগের ব্যাপারে সরকার নয়, কমিশনের সুপারিশ ও অনুমোদনের বিধান রাখতে হবে। যা দশ শতাংশের বেশি হবে না। পাশাপাশি সরকার থেকে প্রস্তাবিত কোনো সরকারি কর্মচারীর প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকলে কমিশনের অভিমত প্রাধান্য পাবে, এমন এরূপ বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ড. জামান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে কমিশনের সদস্যদের সদস্য-সচিব নিয়োগের বিধান বাতিল করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সচিবসহ সকল জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের হাতে দিতে হবে এবং সচিবের পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতা সরকারের সচিবের সমান হতে হবে। সচিব কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্বের পাশাপাশি পদাধিকার বলে কমিশনের নন-ভোটিং সদস্যের দায়িত্ব পালন করবেন, এমন বিধান রাখা যৌক্তিক হবে। তাছাড়া, বাছাই কমিটির সদস্যদের বিশেষ করে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নাগরিক কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে তা সুস্পষ্ট করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বাছাই কমিটি দ্বারা চূড়ান্ত সুপারিশকৃত প্রার্থীদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিধান অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বানও জানান তিনি।
What's Your Reaction?

