দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আড়তে চামড়ার বাজারে অস্থিরতা, হতাশ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে কুরবানির ঈদের প্রথম দিনেই চামড়ার বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার আড়ৎ চক বৈদ্যনাথে চামড়া নিয়ে এসে বিপাকে পড়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। সরকার দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে কোন চামড়া কিনছেন না ব্যবসায়ীরা।
হাঁক ডাক, দর-দাম আর বেচাকেনায় জমে উঠেছে নাটোরের চক বদ্যনাথ চামড়ার আড়ৎ। ঈদের দিন বেলা দুইটার পর থেকেই জমে উঠে বেচা-কেনা। নাটোর জেলা এবং আশেপাশের উপজেলা ও জেলাগুলো থেকে কুরবানির কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করে। তবে আশানারুপ দাম না পেয়ে বরাবরের মতো এবারও হতাশ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
এই যেমন নাটোরের নলডাঙ্গা এলাকার মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ী অচিন্ত্য দাস চামড়া নিয়ে এসেছিলেন নাটোরের চক-বদ্যনাথ আড়তে। কিন্তু বিধিবাম, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি কিন্তু ঘটেছে উল্টো। গত বছর থেকেও এ বছর চামড়ার দাম কম বলে অভিযোগ তার।
শুধু অচিন্ত্য দাস নয় নাটোর এবং আশেপাশের জেলা থেকে যে সমস্ত চামড়া নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা তারাই পড়েছেন ভোগান্তিতে।
বিগত বছরগুলোর মতোই এ বছরও চামড়ার দামে ধ্বস নেমেছে। আড়তগুলোতে গরুর চামড়া কেনাবেচা চলছে প্রতি পিস ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা দরে। নানা অজুহাতে আড়ৎদাররা দাম দিতে চাইছেন না অভিযোগ মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। এমতাবস্থায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম তাদের।
এছাড়া, ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছিলেন পুঠিয়ার ব্যবসায়ী আলম খন্দকার। তিনি জানান, প্রায় শ'খানেক ছাগল, ভেড়া ও খাসির চামড়া কিনেছিলেন ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। সব মিলিয়ে আড়তে এসে প্রতিপিস চামড়ার দাম পেয়েছেন ৩৫ টাকা দরে। এতে তার লস না হলেও খুব একটা লাভ হবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে হঠাৎ বৃষ্টি এবং প্রচন্ড গরম পড়ায় চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বেশি দামে চামড়া কিনতে পারছেন না বলে জানান আড়ৎ মালিকরা। পাশাপাশি ব্লু চামড়া বা কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হলে চামড়ার দাম বেশি হতো বলে অভিমত তাদের। চামড়ার দাম কম হওয়ার জন্য তারা ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কে দায়ী করছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুধু দাম বেঁধে দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন কিন্তু মাঠ পর্যায়ের যে বাস্তবতা সেটা তারা খেয়াল করেন না। সরকার কাঁচা চামড়া ব্লু চামড়া রপ্তানির ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত সরকার তাদের সেই ঘোষণা ঠিক রাখতে পারেননি। আর এই কারণেই চামড়ার দাম নিম্নমুখী।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন চামড়ার দাম বাড়াতে কাঁচা চামড়ার বিদেশে রপ্তানির কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য যে কেমিক্যাল এর প্রয়োজন সেই কেমিক্যালেও রয়েছে সিন্ডিকেট। বিগত সরকারের সময়ও চেষ্টা হয়েছিল ব্লু চামড়া রপ্তানির কিন্তু দেশীয় শিল্প রক্ষার নাম দিয়ে ব্লু চামড়া রপ্তানি সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকারও পারবে কিনা তা নিয়ে এই ব্যবসায়ীরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
আর চামড়া কম দামে কেনার কথা অস্বীকার করে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হালিম খান জানান, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনাবেচা চলছে। এমনকি তিনি ট্যানারি মালিকদের সুরে ব্লু ওয়েট চামড়া রপ্তানির বিপক্ষেও কথা বলেন।
এদিকে, দাম কমার অজুহাতে যাতে চামড়া পাচার হতে না পারে এবং নিরাপত্তার যাতে কোন ঘাটতি দেখা না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা আছে বলে জানান নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন।
ব্লু ওয়েট বা কাঁচা চামড়া রপ্তানি হোক বা না হোক চামড়ার ন্যায্য দাম পেলেই সন্তুষ্ট থাকবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। জেলায় এ বছর গরু, মহিষ, ছাগল মিলিয়ে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্যবসায়ীরা।
What's Your Reaction?






