নওগাঁর বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তার অবহেলায় অনিশ্চিত স্বাস্থ্য সেবা

নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ২ লক্ষ ৬ হাজার ৫ শত ৪৭ জন মানুষের বসবাস। এটি জেলার ছোট একটি উপজেলা। জেলা সদর থেকে এই উপজেলার দুরুত্ব ১৭ কিলোমিটার। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে ৫০ শর্য্যা একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেন সরকার। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার অবহেলা আর উদাসীনতায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৯.৩৫ মিনিটে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। হাতে ও পায়ে ব্যথা নিয়ে কয়েকজন রোগী চিৎকার করলেও পাচ্ছে না সেবা। কষ্টে কাটছে তাদের সময়।এসব বিষয় দেখভালের জন্য অফিসে তখনো আসেনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানা। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা ও দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। আর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন দাপ্তরিক কাজে বাহিরে থাকতে হয় মাঝে মধ্যে।
সুত্র বলছে, বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানা ২২শে জুন ২০১৯ প্রথম যোগদান করেন এর পর ১৯ নভেম্বর ২২ সালে মাতৃকালীন ছুটিতে যান মাতৃকালীন ছুটি শেষে ৭ মাস পর আবারও যোগদান করেন ১৯ শে জুন ২০২৩ সালে। আবারও এ হাসপাতালের দায়িত্ব নেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে তিনি অনুপস্থিত থাকেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসে কর্মস্থলে ১০ দিন অনুপস্থিত আর ডিসেম্বর মাসে ১৮ দিন অনুপস্থিত ৬ দিন দেরি এবং বাকী দিন গুলোতে সে সকাল সাড়ে দশটার পর আসেন এবং দুপুর দেড় থেকে ২ টার মধ্যে ত্যাগ করেন। তার দেরীতে আসা এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে যাওয়া যেন নিত্য দিনের রুটিনে পরিনত হয়েছে।
স্থানীয় ও রুগীর স্বজনদের অভিযোগ বর্তমানে তিনি আরো দেরীতে আসেন। বেশ কয়েকদিন সরেজমিনে গিয়েও তার সত্যতা পাওয়া যায়। শুধু কর্মস্থলে অনুপস্থিত নয়, সে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সরকারি গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি কোয়াটারে থাকার নিয়ম থাকলেও সে যোগদানের পর থেকেই নওগাঁ সদর থেকে অফিস করেন। আর এভাবেই তিনি সেবাগ্রহীতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দিনের পর দিন, এমন কি মাসের পর মাস ইচ্ছে মতো চাকুরি করে চলেছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ টিটু বলেন, গত এক বছর থেকে চালক অভাবে এ্যম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত এই উপজেলার অসহায় রোগীরা। ফলে চালক অভাবে নষ্ঠ হচ্ছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এ্যাম্বুলেন্সটি। এবং গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হাসপাতালে চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে এই চুরিতে হাসপাতালের রাজস্ব খাতের ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা চুরি হয়। চোরকে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেলেও এই চুরির রহস্য এখনো উদঘাটন করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ বিন হাফিজ বলেন, চলতি মাসের ৭ এপ্রিল আউটডোরে টিকিট কাউন্টারে রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার কাছে জানালেও ব্যবস্থ্যা নেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থ্যা।
সচেতন মহল বলছে, সরকারি বিধি অনুসারে একজন কর্মকর্তা তিন বছরের অধিক একই জায়গায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু নিজ কাজে এতো উদাসিনতা আর অবহেলার পরও সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন ডাঃ কানিজ ফারহানা। তার বিরুদ্ধে দ্রত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করেছি, পুলিশ তদন্ত করছে। রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকার জায়গায় ৫ টাকা বেশী নেওয়ার বিষয়ে তাকে সাবধান করেছি।
আপনি মাসে ১২ দিন অফিস করেন আর অন্য দিনগুলোতে লেট করে অফিসে আসার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাপ্তরিক কাজের জন্য এমনটা মাঝে মাঝে হয়। ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ী ব্যবহারের কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে জ্বালানী বাবদ কোন বিল পাইনি। নিজ খরচে গাড়ী ব্যবহার করছি।
সিভিল সার্জন ডাঃ মো. আমিনুল ইসলাম এর কাছে মুঠোফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার অবহেলা ও উদাসীনতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি এই জায়গায়, কোথায় কোথায় সমস্যা আপনি হোয়াটসএ্যাপে লিখে দিন। আমি দেখছি। আমি বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে। ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা চুরি, ৪ মাসেও হয়নি মামলা। চালক অভাবে ১ বছর এ্যামবুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা।
সরকারি গাড়ী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, মাসে অফিস করেন মাত্র ১২ দিন। হাসপাতাল কোয়াটারে থাকার কথা থাকলেও, নওগাঁ সদর থেকে করেন অফিস।
আউটডোরে ৩ টাকার টিকেট, রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। তাছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদের চিকিৎসা দানের উদাসীনতার বিষয়ে।
What's Your Reaction?






