মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা, ভিডিও ভাইরাল
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মামলা পরানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার এক মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সেই সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি তুলেছেন দেশের সচেতন নাগরিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা বীর মক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু।
তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি একটি হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ ছাড়া একাধিক মামলা আছে তার নামে। তার ছেলে মানুষকে অত্যাচার করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে ছবি ছিল আব্দুল হাই কানুর। সে কারণে তিনি রোষানলে পড়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরানোর ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক আব্দুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়েছেন। এ সময় পাশ থেকে একজন তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলছেন।
অপরজন বলছেন- কুমিল্লা থেকে বের হয়ে যেতে। এ সময় আব্দুল হাই কানু আকুতি করে বাড়ি থেকে বের হবেন না বললে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বলেন- আমরা এত বছর বাড়িতে থাকতে পেরেছি? এ সময় আরেকজন বলে ওঠেন, আপনি পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাফ চাইতে পারবেন? এ সময় তিনি হাতজোড় করে সবার কাছে মাফ চান। এক পর্যায়ে তাকে দুই হাত ধরে দুজন ব্যক্তি সামনের দিকে নিয়ে যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল রোববার সকালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বাজার করতে বের হন। এ সময় তাকে স্থানীয় কয়েকজন ধরে নিয়ে যান কুলিয়ারা হাইস্কুলের সামনে।
সেখানে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়। পরে রাতে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনার পর পালিয়েছেন জড়িতরা। এদিকে জড়িতদের ধরতে পুলিশের কয়েকটি টিম তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বলেন, ‘২০১৬ সালে আমার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব বাতিসা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সায় ছিল না। তিনি নানাভাবে আমাদের পরিবারকে হয়রানি করেন। আমার বিরুদ্ধে নয়টি মামলা করা হয়। কারাগারেও যেতে হয়। কারাগারে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের সঙ্গেও কয়েকদিন ছিলাম। রবিবার মুজিবুল হকের নির্বাচনী এলাকায় আমার ওপর জঘন্য আচরণ করা হয়েছে। তারা আমার গলায় ছুরি পর্যন্ত বসিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমি গ্রামের বাড়িতে আসি। এর আগে মুজিবুল হকের রোষানলে পড়ে এলাকা ছাড়া ছিলাম। ভেবেছিলাম এবার স্বস্তিতে গ্রামে থাকতে পারব। কিন্তু ওরা পাকিস্তানি হায়নার চেয়েও হিংস্র আচরণ করেছে আমার সঙ্গে।’
তারা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওদের একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। ২০০৬ সালে সে দুবাই চলে যায়। ৫ আগস্টের পর ফিরে এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। আরেকজন গাজীপুরে থাকে।’
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।
What's Your Reaction?