জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, বিলীন বসতবাড়ি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে এই ভয়াবহ ভাঙনের ঘটনা ঘটে। এতে সরাসরি নদীতে হারিয়ে গেছে অন্তত ২০টি বসতবাড়ি। আশপাশের তিনটি গ্রামের আরও ৫০টির বেশি বসতবাড়ি ও স্থাপনা ভাঙনের আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছয় ধাপে ইতোমধ্যে প্রায় ৮০০ মিটার বাঁধ পদ্মায় ধসে পড়েছে। এতে অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি এবং ৩৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সর্বশেষ ভাঙনের পর সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে জাজিরার আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি ও উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার। হুমকির মুখে রয়েছে মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার এলাকার ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও।
ভাঙন ঠেকাতে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু পদ্মার প্রচণ্ড স্রোতে সেগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে।
ভাঙন প্রথম শুরু হয় গত বছরের নভেম্বর মাসে নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায়। এরপর চলতি বছরের ৭ জুন, ৭ জুলাই, ৯ জুলাই ও ২৩ জুলাই বাঁধের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ে। সর্বশেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ভাঙনে আরও ২০০ মিটার বাঁধ পদ্মায় বিলীন হয়।
আলম খাঁরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার মাদবর বলেন, ‘তৃতীয় দফায় নদীভাঙনে আমার সব শেষ। পদ্মা সেতু হওয়ার পর ভেবেছিলাম আর নদীভাঙন হবে না। কিন্তু এবার সবই ভেঙে গেল। এখন পরিবার নিয়ে রাস্তায় বসে আছি।’
ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দির আলী হোসেন মাদবর বলেন, ‘রাতে ঘুমাতে পারি না আতঙ্কে। তাই নিজের হাতে ঘর ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোথায় উঠবো, জানি না।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে জিওব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। অস্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেয়া হলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণসামগ্রী, টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। যারা বসতভিটা হারিয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য খাস জমি চিহ্নিত করে সেখানে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণের পর থেকেই নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করলেও, এর দক্ষিণাংশে অবস্থিত তিনটি গ্রাম প্রতিবছরই বর্ষায় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ‘স্থায়ীভাবে নদীতীর সংরক্ষণ ছাড়া আমাদের কোনো স্থায়ী নিরাপত্তা নেই। প্রতি বছরই ঘরবাড়ি, বাজার আর জীবন ভাঙনের কবলে চলে যায় পদ্মায়।’
What's Your Reaction?






